ঢাকা: মুনাফা করার পরও শেয়ারবাজারে দুরবস্থা কাটছে না ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৬টির শেয়ার দাম নেমে গেছে অভিহিত মূল্যের(ফেসভ্যালু) নিচে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। যমুনা ব্যাংকের তথ্য পাওয়া যায়নি। বাকি ২৮টি ব্যাংকই মুনাফায় রয়েছে।
এরমধ্যে ১৭টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। যার মধ্যে অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া দুটি ব্যাংকও রয়েছে।
বাংকের শেয়ারের দাম এতো কমে যাওয়ার কোন যুক্তি সংগত কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কেলেঙ্কারির ধকল অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ব্যাংক খাত। এখন বেশ মুনাফা করছে। খেলাপী ঋণ কমে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোও অনেক সতর্ক হয়েছে। ফলে সহসা ব্যাংক খাতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া এনসিসি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে নিট মুনাফা করেছে ৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া আর একটি ব্যাংক প্রিমিয়ার। এই ব্যাংকটি আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম অর্ধে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছে ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা বাকি চারটি ব্যাংকের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩২ কোটি ২০ লাখ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী বাংকের মুনাফা হয়েছে ২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ৯ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার যুক্তি সংগত কোন কারণ নেই। বিনিয়োগকারীরা যথার্থ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, এখন ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমেছে। এর পিছনে কিছুটা কারণ হলো নীতিমালার নমনীয়তা। তবে মূল খেলাপী ঋণের পরিমাণও বেশ কমেছে। আমি মনে করি ব্যাংকের শেয়ারে এখন বিনিয়োগ করা নিরাপদ। মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ শতাংশের নিচে থাকা শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক রিসার্চ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। এরই একটি প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ধসের আগে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম ফেস ভ্যালুর (অভিহিত মূল্য) ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি ছিলো। কিন্তু এখন কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে। ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের দাম এতো কমে যাওয়ার কোন যুক্তি সংগত কারণ নেই।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সবকটি বাংকের পিই রেশিও ১৫ নিচে অবস্থান করছে।
এদিকে ২০১২ সালের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর দুরবস্থা বিরাজ করছে। এক সময় শেয়ারবাজরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত হতো ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়তো এ খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম ওঠা-নামার ওপরে।
ব্যাংক কেলেঙ্কারির আগের বছর ২০১১ সালে মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশই ছিলো এ খাতের দখলে। এমনকি ২০১২ সাল শেষেও লেনদেনের শীর্ষে ছিলো ব্যাংক খাত। বছরটিতে মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিলো ব্যাংক খাতের অবদান।
ধারাবাহিক ভাবে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন কমার কারণে চলতি বছরের জুলাই মাস শেষে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে। জুনে যা ছিলো ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরে নিট মুনাফায় শীর্ষ রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ৬ মাসে নিট মুনাফা করেছে ৩৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১৯ আগস্ট লেনদেন শেষে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৮০ পয়সায়।
২১৭ কোটি টাকা মুনাফা করা প্রাইমের দাম ২০ টাকা ২০ পয়সা। ২০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুনাফা করা ইউসিবিএল’র দাম দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৫০ পয়সা। ১৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা করা সাউথইস্টের দাম ১৮ টাকা। ১৪২ কোটি ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করা দি সিটি ব্যাংকের দাম ১৯ টাকা ৩০ পয়সা। ১২৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা করা ইবিএল’র দাম ২৫ টাকা ১০ পয়সা।
এছাড়া ১৫ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে আল-আরাফা ৮৪ কোটি ৬০ লাখ, ব্যাংক এশিয়া ৭৩ কোটি ৩০ লাখ, মার্কেন্টাইল ৩৭ কোটি ২০ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৪৯ কোটি ৯০ লাখ, ন্যাশনাল ১১০ কোটি ৩০ লাখ, ওয়ান ৫২ কোটি ৫০ লাখ, শাহজালাল ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ও এসআইবিএল ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।
১৫ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা ৯৮ কোটি ৭০ লাখ, এবি ৮৩ কোটি ৬০ লাখ, আইএফআইসি ৮৪ কোটি ৬০ লাখ, পূবালী ১২৫ কোটি ৩০ লাখ, ট্রাস্ট ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ও উত্তরা ব্যাংক ৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এএসএস/এনএস/