ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মাশরুমে মিলছে মুনাফা

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
মাশরুমে মিলছে মুনাফা

ঢাকা: গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে মাশরুম চাষে তিনগুণ উৎপাদন বেড়েছে। কর্মসংস্থান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা ঘরে তুলছেন মুনাফা।

ইতোমধ্যে দেশের আবহাওয়া উপযোগী নয়টি জাতও অবমুক্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন মাশরুমে মিলছে সফলতা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মাঠ পর্যায়ে এ ফসলের বিস্তৃতি ঘটাতে পারলে বিপ্লব ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, সাভার অফিস ও মাশরুম চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩২ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩০ হাজার, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২২ হাজার, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ১৮ হাজার, ২০১০-১১ অর্থ বছরে সাড়ে ১৪ হাজার ও ২০০৯-১০ অর্থ বছরে সাড়ে ১০ হাজার মাশরুম উৎপাদন হয়েছে।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা ড. নিরদ চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, মাশরুমের বীজ উৎপাদনে সমস্যা ছিল। তবে ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে বীজ উৎপাদন অনেক সহজ হয়েছে।

বর্তমানে চাষিরা তাদের বাড়িতেই স্বল্প খরচে যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা জিনিসপত্র দিয়েও মাশরুম বীজ উৎপাদন করতে পারছেন বলে জানান তিনি।

২০০১ সালে শখের বশে মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন রাজবাড়ী জেলার পাংশা এলাকার কে এম ফজলুল হক।

কিন্তু গত কয়েক বছরে তার মাশরুম চাষের ব্যাপ্তি বেড়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মাশরুম বাজারে বিক্রি করতে পারছেন।

ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পেশা হিসেবে মাশরুম চাষ করবো এটা ভাবিনি। কিন্তু শুরু করার পর অনেক বড় সম্ভাবনা দেখেছিলাম। একসময় পেশা হিসেবে স্বীকৃতিও ছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। শুধু আমি নই, আমার মতো অনেকেই মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

এ ফসল চাষে সফলতা পেতে হলে নিবিড়ভাবে লেগে থাকাটা খুব জরুরি তিনি মনে করেন।

মাশরুম চাষিরা জানান, বীজ বা স্পন পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। আগে প্রকল্পের মাধ্যমে বীজ বা স্পন সরবরাহ করা হলেও, বর্তমানে ইনস্টিটিউট হওয়ায় তা চাষিরা পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।

ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, ইনস্টিটিউটে মান নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ ল্যাবরেটরি রয়েছে। এখান থেকে মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষুধিগুণ নির্ধারণ করা যায়। এছাড়া ল্যাবরেটরিতে মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্যের অণুজীবের উপস্থিতি ও সংখ্যা গণনার ব্যবস্থা রয়েছে।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি মেট্রিক টন খড় উৎপাদন হয়ে থাকে। এ খড়ের মাত্র এক ভাগও যদি মাশরুম চাষে ব্যয় করা যায় তাহলে বছরে অন্তত পাঁচ লাখ মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদন সম্ভব। যার আর্থিক মূল্য হবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এতে অন্তত দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব।

যেভাবে মাশরুম চাষ করবেন
মাশরুম চাষ করতে গেলে প্রথমে সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। সঠিকভাবে কাজ পরিচালনার জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও নিতে হবে। ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীকে আগে থেকে নিবন্ধন করতে হবে।

ঘরে বসে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা যায়। গ্রাম বা শহরের বেকার যুবকদের পাশাপাশি মহিলারাও মাশরুম চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেন।

চাষের উপযোগী স্থান
মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। এর জন্য আবাদি জমিরও প্রয়োজন হয় না। মাশরুম চাষ করার জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় ছন বা বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করতে হয়। মাটির দেয়াল দিয়েও ঘর তৈরি করা যায়। আবার বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা যায় ঘর। তবে এক্ষেত্রে ঘরের ভিতর যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাঁশের বেড়ায় মাটি লেপে দিতে হবে।

উপকরণ
প্রথমে সংগ্রহ করতে হবে মাশরুমের বীজ বা স্পন। বেড বা মাদা তৈরির জন্য দরকার হবে ধানের শুকনো খড়। বেডের স্তর ও উপরে ব্যবহারের জন্য মিলের ছাট তুলা, শিমুল তুলা, ধানের কুড়া বা ছোলার বেসন লাগবে। খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির বড় চাড়িবা গামলা হলেও চলবে। বেডের তলায় ও উপরে ব্যবহারের জন্য পলিথিন কাগজ দিতে হবে।

ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হ্যান্ড স্প্রেয়ার, জীবাণুনাশক, ব্লেড বা ছোট ছুরি, বালতি ও আনুষঙ্গিক উপকরণের দরকার হবে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায়, যা অন্য ফসলের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
একে/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।