ঢাকা: দেশের বাজারে শীর্ষস্থান অর্জনের পর এবার রফতানিতে আরও জোর দিচ্ছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির লক্ষ্য বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনকে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
ওয়ালটনের এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নতুন কারখানা ও উৎপাদন ইউনিট স্থাপন, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, পণ্যের উচ্চমান নিশ্চিতকরণ, পণ্যমান নির্ণয়ে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন, বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণ, বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্র্যান্ড নিবন্ধন এবং তাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সার্টিফিকেশন ইত্যাদি।
দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়ালটন। উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে পণ্যমান উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমে যাচ্ছে। এ লক্ষে ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
ফ্রিজ উৎপাদনের জন্য নতুন একটি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন ওই কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রধানত উন্নত বিশ্বের বাজারকে টার্গেট করে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজের ওই উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে ফ্রিজ উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক ফ্রিজ রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। এ জন্য নিজস্ব বিক্রয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ফ্রস্ট ফ্রিজের উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে।
ফ্রিজের মতো টিভি সেট বিক্রিতেও ওয়ালটন বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড। এ দুটি পণ্যের সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার এখন ওয়ালটনের। এ অবস্থায় নতুন পিকচার টিউবে আধুনিক সিআরটি টিভি তৈরি হচ্ছে, যা ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে। এদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে এলইডি টিভি বাজারে এনেছে ওয়ালটন। পর্যায়ক্রমে এলইডি টিভির দামও আরও কমে আসবে।
ফ্রিজ-টিভির মতো এয়ার কন্ডিশনার বিক্রিতেও শীর্ষে ওয়ালটন। সঠিক বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) থাকায় এসি সম্পর্কে যারা ভালো জানেন তাদের পছন্দের শীর্ষে ওয়ালটন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এসির মান আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া চাহিদা বাড়ায় নতুন করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মোটরসাইকেল উৎপাদনেও।
এর বাইরে কম্প্রেসার কারখানা স্থাপন করছে ওয়ালটন। আগামী বছর থেকে এশিয়ার সর্বোচ্চ মানের কম্প্রেসার তৈরি হবে বাংলাদেশে। বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা জার্মান প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি এবং মেশিনারিজের সমন্বয়ে বছরে ৪০ লাখ কম্প্রেসার তৈরি হবে, যার ২৫ লাখ থাকবে রফতানির জন্য। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রফতানিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যন্ত্রাংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কয়েকটি দেশ।
বিশ্বায়নের যুগে রফতানি বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশ তথা সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সুনামের জন্য রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়ালটন। বর্তমানে বেশ কিছু দেশে প্রবেশ করেছে ওয়ালটন ব্র্যান্ড। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে বাড়ানো হচ্ছে রফতানির পরিমাণ। রফতানির তালিকায় নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে কয়েকটি দেশ। বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগ তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে। বাজার সম্প্রসারণ, পর্যবেক্ষণ ও সম্ভাবনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে আইএসও সনদ রয়েছে ওয়ালটনের। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে পণ্য প্রবেশে সেসব দেশে কোম্পানি, লোগো ও ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন পড়ে, প্রয়োজন হয় সার্টিফিকেশনের। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে এসব আনুষ্ঠানিকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, বাহরাইন ও ইয়েমেনসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বাজারকে টার্গেট করে রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলছে। বিশেষ করে, আমেরিকা এবং ইউরোপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, পণ্যের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ রফতানির অর্ডার আসছে, এটা শুধু ওয়ালটন নয়, দেশের জন্যও সুসংবাদ। সেই সঙ্গে বিদেশের ইলেকট্রনিকস মেলা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে প্রচারণামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, বাংলাদেশের বাজারে ওয়ালটন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু বাংলাদেশ নয়, এখন আমাদের টার্গেট বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়া। এ জন্য কারখানা স্থাপন, পণ্যের মান উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
আইএ