ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রশ্নবিদ্ধ ডিসিসিআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
প্রশ্নবিদ্ধ ডিসিসিআই

ঢাকা: সদস্যদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।

রোববার(২৩ আগস্ট’২০১৫) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায় খরচ বৃদ্ধি’ নিয়ে এক সেমিনারে ডিসিসিআই’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি।


 
এক সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন ব্যবসায়ী এডিস লাইসেন্স’র আবেদন করে দুই বছরেও পায়নি। তাহলে ডিসিসিআই কি করে? ডিসিসিআই তো সরকারকে অবহিত করতে পারতো। তাহলে সদস্যদের জন্য ডিসিসিআই কি কাজ করছে?

ডিসিসিআই’র উচিত ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করা। ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারকে অবহিত করুন, বলেন আবুল কালাম আজাদ।
 
সেমিনারে উপস্থাপন করা প্রবন্ধের তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের এই মূখ্য সচিব। তিনি বলেন, ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা পক্ষপাতমূলক। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নিবন্ধন ফি ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এটি সঠিক নয়। সাংবাদিকের এ তথ্য যাচাই করে উপস্থাপন করা উচিত।

ব্যবসায়ে গোপন ব্যয়’র (হিডেন কস্ট) বিষয়ে তিনি বলেন, গোপন ব্যয় কমাতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে হবে। সরকার চায় গোপন ব্যয় কমুক। যত বেশি ডিজিটাল হবে,  গোপন ব্যয় ততো কমে আসবে।
 
ভূমির শ্রেণী বদলের খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই না ভূমির শ্রেণী বদল হোক । কারণ প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে এক সময় কৃষি জমিই থাকবে না। এ জন্য আমরা বেশ কটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করুন।
 
তিন আরও বলেন, সুদের হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। কিন্তু আপনারা এটি বলেন না। শুধু বলেন সুদের হার অনেক বেশি। এক সময় দেশে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ছিলো। এখন এটি ১৩/১৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
 
বিদ্যুতের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সচিব আমাকে বলেছেন প্রত্যেককে বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষমতা বিদ্যুৎ বিভাগের রয়েছে। যারা বিদ্যুৎ পায়নি আপনারা (ডিসিসিআই) আমাদের কাছে তাদের তালিকা করে দিন।
 
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ’র সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. শোয়েব চৌধুরী।
 
এবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডেড ওয়্যার হাউজের সুবিধায় আনা পন্য সরাসরি খোলা বাজারে চলে যাচ্ছে। সরকারের দেয়া সুবিধা এভাবে অপব্যবহারের কারণে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। এ অনিয়ম বন্ধ করা গেলে দেশে দু’টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব।
 
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এনবিআরএ বাঘ আছে এমন মনে করে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যারা কর দিয়ে সহায়তা করছে তাদেরকে এনবিআর ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে এখন। তবে যারা অনিয়ম করছে তাদের জন্য এনবিআর এখনও বাঘ।
 
নজিবুর রহমান বলেন, পোশাক খাতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সরকার সকল খাতেই পোশাক খাতের মতো প্রণোদনা দিতে চায়।

সেমিনারে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৫ সালের গেজেট অনুসারে দেশে ব্যবসা নিবন্ধন  (ট্রেড লাইসেন্স) ফি ৫৬ দশমিক ৫২ শতাংশ থেকে ৪৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। এই বৃদ্ধির গড় ২৬৩ শতাংশ। আর নিবন্ধন নবায়ন ফি ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বাড়বে ৮৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
 
এছাড়া ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমদানি নিবন্ধন সনদ নিতে ২০০৬-৭ অর্থবছরে খরচ হতো ২ হাজার ৫’শ টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ৫০ লাখ টাকার আমদানির ক্ষেত্রে ২০০৬-৭ অর্থবছরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিলো ৮ হাজার টাকা। যা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা।

একই সঙ্গে নবায়ন ফি বেড়েছে ।   ৫ লাখ টাকার নবায়ন ফি ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ৫০ লাখ টাকার ক্ষেত্রে নবায়ন ফি ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
 
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ইন্ডেটিং এবং কমিশন এজেন্ট এর লাইসেন্স ফি ১০০০ টাকা থেকে ৪০০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্লিয়ারিং ও ফরওয়াডিং এজেন্ট, ট্রাভেলিং এজেন্ট, রিক্রটিং এজেন্ট এর ফি ১৫০০ টাকা থেকে  ২৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫০০০ টাকা করা হয়েছে।   রপ্তানি লাইসেন্স ৫০০ টাকা থেকে ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩০০০ টাকা করা হয়েছে।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমদানির তথ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। আমরা বলছি চীন থেকে আমদানির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার। আর চীন বলছে আমদানির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। তাহলে মাঝের ৪ বিলিয়ন ডলার কোথায় যায়?
 
তিনি বলেন, সরকার জিএসপির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আমরা আশা করি জিএসপি ফিরে পাবো। কারণ ১৬টি শর্তের মধ্যে ১টি বাদে সবকটি শর্ত আমরা পূরণ করেছি। বাকি যে শর্তটি পূরণ করা হয়নি সেটি হলো শ্রম আইনের বিধিমালা।

সেমিনারের শুরুতেই হোসেন খালেদ বলেন,  ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় কমছে না। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের ফি  অনুযায়ী একজন নতুন ব্যবসায়ী আমদানি, রপ্তানি এবং ইন্ডেটিং ব্যবসা করতে চাইলে তাকে সরকারের বিভিন্ন অফিসে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। ফলে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের দাম সমন্বয় করা উচিত। কারণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এখন ভালো মুনাফা করছে। আর জিএসপির জন্য এখন বাংলাদেশ সরকারের উচিত ইউএস সরকারকে আরও তাগিদ দেওয়া।

তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। প্রতিবছর ব্যবসার ব্যয় ১১ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ ব্যয় কমানো উচিত। সিটি করপোরেশনের উচিত কিভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায় সে দিকে নজর দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।