ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজকে সেলিম এইচ রহমান

প্রতিশ্রুতি রক্ষায় হাতিল’র এগিয়ে যাওয়া

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় হাতিল’র এগিয়ে যাওয়া ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেড় যুগ পেরিয়ে গেছে হাতিলের। প্রযুক্তির ছোঁয়া, নিত্যনতুন নকশা, গুণগত মানসম্মত পণ্য সরবরাহে সফলতা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

হাতিলের পণ্যের বিস্তৃতি দেশ ছাড়িয়ে এখনবিশ্ববাজারে।

হাতিল পণ্যের এই সফলতার গল্পটা কেমন, শুরুটা কেমনভাবে হয়েছিল, আর এই সফলতার নেপথ্যেই কী আছে, বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হাতিলের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবু খালিদ।

বাংলানিউজ: আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা কীভাবে এলো?

সেলিম এইচ রহমান: ৮০ দশকে পড়াশোনা শেষ করে বাবার প্রতিষ্ঠান এইচএটিম্বার-এ বসতে শুরু করি। সেখানে যেসব ক্রেতা বাড়ির আসবাব, দরজা, জানালা তৈরির জন্য কাঠ কিনতে আসতেন তাদের কাছে কাঠ বিক্রি করতাম।

এভাবে চলতে চলতে দুই বছরের মাথায় হঠাৎ মনে হলো-মানুষ যখন বাড়ি করেন তখন বাড়ির দরজা, জানালাসহ আসবাব তৈরির জন্য কারিগরদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেন। কিন্তু কারিগরদের ব্যবহার সাধারণত ভালো হয় না, বিশেষ করে তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না। যে বাজেট দেয় তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এরকম নানা সমস্যায় পড়তে হয় গ্রাহকদের।

এছাড়া কাঠ কিনতে আসা গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার পর বুঝতে পারলাম গ্রাহকদের কাঠ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে না। এসব ভাবতেই, মনে হলো আসবাব তৈরি নিয়ে যদি একটু সাংগঠনিকভাবে চিন্তা করি তাহলে কিন্তু একটা ব্যবসার মডেল দাঁড়াতে পারে। এরপর থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলানিউজ: হাতিলের যাত্রা শুরুর কথা বলবেন কি...

সেলিম এইচ রহমান: হাতিল যাত্রা শুরু করে ১৯৮৯ সালে। সে সময়ে বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকানের মাধ্যমে আসবাব বিক্রি হতো। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বোর্ড, পারটেক্স বা এ ধরনের বোর্ড তৈরির একটা মাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল।

এছাড়া ওই সময়ে সলিড কাঠের দরজা তৈরির কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তখন আমার কাছে মনে হলো-বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি। এরপর বাবার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। উনি সম্মতি দিলেন। সেই চিন্তার ফসলই হলো আজকের ‘হাতিল’।

বাংলানিউজ: হাতিল নামটা বেছে নেয়ার কারণ কি।

সেলিম এইচ রহমান: আমার বাবার প্রতিষ্ঠানের নাম হলো এইচএটিম্বার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে হাতিল নামকরণ করা হয়। এইচ হলো আমার বাবার নাম হাবিবুর রহমান, এ হলো আমার মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। তাদের নামের প্রথম অক্ষর এইচএ আর টিম্বারের টি, ইন্ড্রাস্ট্রিজের আই ও লিমিটেডের ল, এসব মিলেই ‘হাতিল’।

বাংলানিউজ: হাতিলের প্রথম পণ্য কি।

সেলিম এইচ রহমান: যদি খুবই সংক্ষেপে বলি তাহলে দরজা তৈরি ও বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে হাতিলের যাত্রা শুরু। যদিও আজ আসবাবের ব্যপ্তিটা বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মূলত হাতিলের শুরুটা দরজা তৈরির মধ্য দিয়ে। এটা আসলে পেছনের গল্প।

বাংলানিউজ: হাতিলের সফলতার নেপথ্যে কি?

সেলিম এইচ রহমান: আমি বিশ্বাস করি প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং তা রক্ষাই হাতিলের সফলতার মূলমন্ত্র। মানুষ প্রথম দিকে বিশ্বাস করতে চায়নি। আপনি যদি আপনার কমিটমেন্টের জায়গায় ঠিক থাকেন তাহলে আজকে আপনাকে বিশ্বাস যদি নাও করে, কাল কিন্তু ঠিকই আপনার পণ্য কিনবে মানুষ। আমি যার সঙ্গে যে কথা বলেছি, যে কথা দিয়েছি। তা রেখেছি। ব্যবসার জন্য এইটা বড় জিনিস।

বাংলানিউজ: শুরুর দিকের কোনো গল্প আছে যা সবসময় আপনার মনে হয়।

সেলিম এইচ রহমান: হ্যাঁ, একটা গল্প আছে যা সব সময়ই আমাকে নাড়া দেয়। শুরুর সময়ে বাবার কাছ থেকে একটা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল দরজা তৈরি করি। এসময় কিন্তু হাতিল দাফতরিকভাবে শুরু করিনি। এক্সপেরিমেন্টাল দরজা তৈরি শুরুর চারদিনের মাথায় আমরা বসে গল্প করছিলাম।

তখন একজন গ্রাহক আসলেন। ওনার নাম মিসেস আজাহার হোসেন। ধানমন্ডিতে ওনার বাড়ি। বাড়িতে ব্যবহারের জন্য কাঠ কিনতে এসেছেন। কোন কাঠের কত দাম সেটা বলছি। অনেকটা গল্প আকারে ওনার সঙ্গে কথা হচ্ছিল।

প্রসঙ্গক্রমে আমার চিন্তার কিছু অংশ ওনাকে বলে ফেলি। উনি কথাগুলো শুনে সন্তুষ্ট হয়ে আমার হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বললেন, ‘ছোট ভাই আমি আর কাঠ কিনলাম না। ’ আমার বাড়ির সব দরজা তুমি করে দিও। উনিই আমার প্রথম গ্রাহক।

ভদ্রমহিলা দেশের বাইরে থাকেন। দেশে আসলেই দেখা হয়। অনেকদিন পরে এসে উনি খোঁজ খবর নিলেন। দেখলেন সেই হাতিল আর আজকের হাতিল। ওনার কাছেও বিষয়টি খুবই পছন্দের। উনি অনুভব করলেন এটি সৃষ্টিতে ওনারও অবদান আছে।

বাংলানিউজ: দুই যুগ পার হয়ে গেছে, তৃপ্তির জায়গাটি কি।

সেলিম এইচ রহমান: হ্যাঁ দেখতে দেখতে ২৫ বছর পার হয়ে যাচ্ছে হাতিলের। তৃপ্তির জায়গা হলো দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি। শুরুর সময়ে এর সংখ্যা ছিল চার থেকে পাঁচ জনের। আমি শুরু থেকে এখনো কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছি। কাজ করতে আমার ভালো লাগে। প্রায় প্রতিদিনই কারখানাতে যাই। সবমিলিয়ে এখন পরিস্থিতি বেশ ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫,২০১৫
একে/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।