ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজকে সেলিম এইচ রহমান

সৎ ইচ্ছা থেকে শুরু করলে সফলতা আসবেই

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
সৎ ইচ্ছা থেকে শুরু করলে সফলতা আসবেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানকে নয় দেশের আসবাব শিল্পকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাতিল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান। সুনাম আর দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন তিনি।



বাংলানিউজের একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের আসবাব শিল্প, তরুণদের নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম, তরুণ উদ্যেক্তা গড়ে তোলার পরামর্শ, রপ্তানীসহ নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবু খালিদ।

বাংলানিউজ: আপনাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলবেন?

সেলিম এইচ রহমান: দুই হাজার ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। একটা প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে তাদের একটা স্বপ্ন দেখানো যে, ‘ভাই আজ তোমরা আসবাবের বড় বড় প্রতিষ্ঠান দেখছো, একদিনই তুমিও পারবে এরকম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। ’

দুই হাজার ছোট ছোট ম্যানুফেকশনারি প্রতিষ্ঠান আছে সেখান থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটা প্রকল্পের আওতায় সিলেটে একটা ৬ দিনব্যাপী কর্মশালা করেছি। পর্যায়ক্রমে আরও একাধিক শহরে করার কথা রয়েছে।

বাংলানিউজ: আসবাব ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তা আসতে চাইলে এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কি?

সেলিম এইচ রহমান: এটা আসলে এক কথা বলা যাবে না। এটার জন্য ডেডিকেশন লাগবে। ব্যবসায় সাফল্য খুব দ্রুত আসে না। ধৈর্য্য থাকতে হবে। সৎ ইচ্ছা থেকে শুরু করলে সফলতা আসবেই।

আসবাবের ব্যবসা শুরু করার জন্য কিন্তু ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার হয় না। একটা জায়গা, কিছু মেশিনারিজ এবং বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। তবে নকশা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এই কাজটি দেখার পাশাপাশি করতে করতেই অনেক কিছু শেখাও যাবে।

প্রথম দরকার ইচ্ছে শক্তি। যে কোনো একটা কিছু শুরু করলে প্রতিবন্ধকতা আসবেই। মনে করুন একটা আসবাব আপরিন তৈরি করলেন। এটা কিন্তু পচে গলে যাওয়ার কিছু নাই। এটি কাঁচা তরকারি বা মাছ মাংসের ব্যবসা নয়, হয়তো একটা ন্যায্য দাম নাও পাওয়া যেতে পারে, তা বলে একেবারেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলানিউজ: আসবাব রপ্তানির বাজার সম্পর্কে কিছু বলবেন?

সেলিম এইচ রহমান: বাংলাদেশে আসবাব বাজারে রপ্তানীর বিশাল একটা সুযোগ আছে। কারণ হলো গার্মেন্ট শিল্প গড়ে ওঠার নেপথ্যে ছিল জনবল। আসবাব শিল্পটাও কিন্তু শ্রমিক নির্ভর।

বাংলানিউজ: রপ্তানী কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, এটার কারণ হিসেবে কী মনে করেন?

সেলিম এইচ রহমান: প্রথম হলো আমাদের স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি ঘটেছে। দুই নম্বর হলো চায়নায় শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। ওরা গ্র্যাজুয়ালি সুইচ করছে হাইটেকের দিকে। যেমন বাংলাদেশে ফ্রেশ লোকের বেতন হয় ৫ হাজার টাকা, কিন্তু চায়নায় ফ্রেশ লোকের বেতন হলো ৩০ হাজার টাকা। এইটুকুই অ্যাডভান্স আমাদের।

বাংলানিউজ: রপ্তানীর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছেন কি?

সেলিম এইচ রহমান: সরকারি নীতিমালায় যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে যদি ভাবা না হয় তাহলে কিন্তু আসবাব শিল্প সামনের দিকে এগুবে না। আমাদের সব ম্যাটারিয়ালস আসে ইম্পপোর্ট হয়ে। আমরা রপ্তানী করলে কাঠ কেনার সময়ের শুল্কটা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু সিস্টেমটা পার হতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

বাংলানিউজ: সিস্টেম লস বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলবেন কি?

সেলিম এইচ রহমান: ১০০ টাকা পেতে গিয়ে যদি ৭০ টাকার সঙ্গে অনেক সময় চলে যায় তখন কিন্তু ওই বিষয়ের ওপর আর মনোযোগ থাকে না। ওটা পেতেও আপনার আগ্রহ থাকবে না।

বাংলানিউজ: কীভাবে আরও দ্রুত গতিতে রপ্তানী বাড়ানো যাবে বলে মনে করছেন

সেলিম এইচ রহমান: আমরা যত কাঠ আমদানি করছি তার ২৫ ভাগ শুল্ক দেই। কিন্তু রপ্তানীর সময়ে শুল্ক ফেরত পাই না। রপ্তানীর সময়ে সঙ্গে সঙ্গে যদি সরকার আমাদের তা দিয়ে দেয় তাহলে রপ্তানী দ্রুত গতিতে বেড়ে যাবে।

আমি যখন পণ্য আনবো তখন শুল্ক দিবো। আবার রপ্তানীর সময়ে তুমি আমাকে দিয়ে দিবে। এতে সমস্যা কি? রপ্তানী করেই কিন্তু চাইছি। আর এখানে ফাঁকি দেয়ার কিছু নেই। সরকারের ঠাণ্ডা মাথায় ভাবা উচিত। আমাদের দাবিগুলো কিন্তু অন্যায় না।

বাংলানিউজ: দেশের বাইরে কাঠ আমদানি করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় কি না?

সেলিম এইচ রহমান: এ বিষয়ে তেমন কোনা প্রতিবন্ধকতা নেই। আমরা যে কাঠ ব্যবহার করি সেগুলো এফএসসি সনদপ্রাপ্ত (ফরেস্ট স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিল)। এসব কাঠ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।

বাংলানিউজ: আসবাব শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু বলবেন।

সেলিম এইচ রহমান: উদাহরণ দিয়েই বলি, আমার ফ্যাক্টরিতে দুই হাজার লোক কাজ করছেন। দুই হাজার মানুষের পরিবারের যদি তিন জন থাকে তাহলে আমার প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে ৬ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। এরকম যদি এক থেকে দুইশ প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে কী দাঁড়াবে!

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
একে/এনএস/

** ‘হাতিল’কে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই
** প্রতিশ্রুতি রক্ষায় হাতিল’র এগিয়ে যাওয়া

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।