ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মায়ানমারের পেঁয়াজে ঝাঁজ কমছে বাজারের

তুষার তুহিন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
মায়ানমারের পেঁয়াজে ঝাঁজ কমছে বাজারের (ফাইল ফটো)

কক্সবাজার: পেঁয়াজের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাজারে আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে মায়ানমারের পেঁয়াজ। দীর্ঘ আট মাস পর দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে মায়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ।

ইতোমধ্যেই কয়েকশ’ টন পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। যা পাওয়া যাচ্ছে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে। দেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক হাজার টন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বাজার সয়লাব হয়ে মায়ানমারের পেঁয়াজে। মায়ানমার থেকে আসা এসব পেঁয়াজের দাম ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে অনেক কম। এছাড়া সরকারও এসব পেঁয়াজ আমদানির মূলে কোনো শুল্ক ধার্য করছে না। ফলে সহসাই পেঁয়াজের দাম কমে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে ধারণা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়তে যাচ্ছে অসাধু মজুতদারদের সিন্ডিকেট।
 
বাজারে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে ৩৩৯ মেট্রিক টন মায়ানমারের পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হয় ১৩৯ মেট্রিক টন ৬৮০ কেজি পেঁয়াজ। বুধবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রবেশ করে আরও ২০০ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কয়েক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পাইকারি বাজারে প্রবেশ করবে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজিতে।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ব্যবস্থাপক অপারেশন (ম্যানেজার) আবু নুর খালিদ বাংলানিউজকে জানান, মায়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য অনেক কম। এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রামের বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত সব খরচ ধরে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে। পাইকারি বাজারে এর দর পড়বে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

বাজারের পেঁয়াজের হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য তিনি অসাধু মজুতদারদের দায়ী করে বলেন, দেশে পেয়াজের চাহিদা ২৩ লক্ষ মেট্রিক টন, আর উৎপাদিত হয় ১৯ লক্ষ মেট্রিক টন। এছাড়া গত কয়েক মাসে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে এদেশে এসেছে। সেই হিসেবে দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। তারপরও সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা হালে পানি পাবে না যদি মায়ানমার থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কারণ মায়ানমারের পেঁয়াজের দাম অনেক কম।

টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা জানান, মায়ানমার থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৪৫ টাকা দামে। ট্রলার ভাড়া, ট্রাক ভাড়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সহ চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে কেজি প্রতি খরচ হয় ৩ টাকা। সর্বসাকুল্যে এর মূল্য ৪৮ টাকা। খাতুনগঞ্জে বাজারে মায়ানমারের এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।
 
পেয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক শওকত আলম বাংলানিউজকে জানান, বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছে। এসব পেয়াজ মায়ানমার থেকে আনা হয়েছে এবং এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭ টাকার মতো।

বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে জানান, মায়ানমার থেকে আরও বেশি করে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবারের মতো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মায়ানমার থেকে দেশের চাহিদা পূরণের জন্য পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ জন্য স্থলবন্দরকে শুল্কমুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত ৫ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও দ্রব্যমূল্য তদারক কমিটির প্রধান অমিতাভ চক্রবর্তী এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম কে এম ইকবালসহ কয়েকজন কর্মকর্তা টেকনাফ স্থলবন্দরের সম্মেলনকক্ষে স্থানীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে মায়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির তাগিদ দিয়েছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।