ঢাকা: বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মিডাস টাস এশিয়া ইনস্টিটিউটের (এমটিএ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে’ তিনি এ আহ্বান জানান।
সামিটে কী-নোট বক্তৃতা দিচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছেন। বিনিয়োগ বাড়াতে গড়ে তোলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে জাপান, চীন ও ভারতকে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে পাঁচশ একর জমির ওপর নির্মিত রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মধ্যে ২৫০ একর জমি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) গড়ে তুলতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীর সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সেসময় বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য পৃথিবীর ৬৮টি দেশে রফতানি করা হতো। মোট রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ৭২৯টি পণ্য পৃথিবীর ১৯২টি দেশে রফতানি করছে, রফতানি আয় এখন ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের জিডিপিতে সার্ভিস সেক্টরের অবদান এখন ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শিল্প খাতের অবদান ৩০ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার দেশের আইটি, চামড়া, ওষুধ, ফার্নিচার, জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার বাউশিয়ায় ৪৯২ একর জমির উপর ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পাঁচশ’টি তৈরি পোশাক কারখানা থাকবে, এখানে আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবে। এখান থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করা সম্ভব হবে।
‘২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার এরমধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ’- বলেন মন্ত্রী
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগবান্ধব আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন আকর্ষণীয় নিরাপদ-বিনিয়োগের স্থান। এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেকেই বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ শুরু করেছে। সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করছে। বর্তমানে দেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো রফতানিতে ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। এরমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, দক্ষ জনশক্তি, ট্যাক্স হ্রাস, পর্যাপ্ত শিল্পের কাঁচামাল- যেমন চামড়া, পাট, হস্তশিল্প ইত্যাদি, স্বল্প মূল্যে দক্ষ যুব জনশক্তি, স্বল্পমূল্যে গ্যাস, পানি-বিদ্যুতের সুব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। পণ্য রফতানির জন্য নৌপথ, রেলপথ এবং আকাশপথে সুব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভূটান, নেপাল যৌথভাবে ইতোমধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রফতানির সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, বেলারুশ, জাপান, নিউজিল্যান্ড, চিলি ও নরওয়েতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি রফতানির সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো বাংলাদেশের তৈরি বেশির ভাগ পণ্যে ডিউটি ফ্রি বাজার সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি গড় ৬ শতাংশের বেশি। দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি গত ১৫ বছরে গড়ে ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামিটে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ঢাকায় নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার চ্যান হিং উইং, সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান এবং মিডাস টাস এশিয়া ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক দাতো আনডে ওয়াং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সামিটের প্যানেল আলোচনা পর্বে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি অাবদুল মাতলুব আহমাদ, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান টিও সিয়ং সিং, মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ও ডিফেন্স স্টেট মিনিস্টার ড. মোহাম্মদ মালিকি বিন ওসমান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।
বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বকসীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এসকেএস/এইচএ