লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ঘর-বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমনের খেত। এতে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক।
স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহে শুরু হওয়া টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে জেলার সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিতরণ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও ত্রাণের চাল।
দুই দিন ধরে বৃষ্টি কমে গেলেও পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। বন্যায় জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের খেত পানির নিচে তলিয়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে।
দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ও সেতু। বন্যার কারণে অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
বুধবার ধীরগতি হলেও নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এরই মধ্যে অনেক পরিবার নিজ নিজ ঘরে ফিরতেও শুরু করেছে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে গেলেও আমন ধানের খেত দেখে কষ্টে আঁতকে উঠছেন জেলার কৃষকরা। তাদের বোনা স্বপ্ন বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ধান খেত দেখে কৃষক পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে কান্নার রোল।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলানিউজকে জানান, টানা ছয় দিনের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার সাত হাজার ৭১৭ হেক্টর জমির আমন ধানের খেত। তবে কৃষি বিভাগের দেওয়া এ তথ্য মানতে নারাজ কৃষকরা। তাদের দাবি দ্বিগুণ পরিমাণ আমন খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
কৃষকরা জানান, পানি নিষ্কাশনের অভাবে দীর্ঘ প্রায় আট/নয় দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ধান গাছের চিহ্নটুকুও নেই খেতে। দীর্ঘ দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ধান গাছ সম্পূর্ণ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পরিবার পরিজনের খাদ্য নিয়েও দুঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা রজবপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নয়দিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় তার দুই বিঘা জমির আমন ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নিজেদের খাবারের জন্যেও কিছু ধান বাকি নেই।
সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার কৃষক নজির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ভাদাই দোলায় এক বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। সেই ধান খেত আজ অবধি পানির নিচেই তলিয়ে রয়েছে। এখন ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তিনি।
কৃষকের রোপণ করা আমন খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় জেলায় এ বছর খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে বলে সচেতন মহল ও কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাফায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু আমন খেতের ক্ষতি হলেও উঁচু অঞ্চলের আমন খেতের অবস্থা মোটামুটি ভাল। এ কারণে জেলায় খাদ্য ঘটতির কোনো আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ধীর ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তারা ঘরে ফিলতে শুরু করেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
আরএ/