ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জিএসপিতে ফিরছে বাংলাদেশ!

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
জিএসপিতে ফিরছে বাংলাদেশ!

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব প্রস্তুতি শেষ করেই জোর আশায় বুক বাঁধছেন সংশ্লিষ্টরা।


 
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) টিম। তারা যা জানতে চান, সবকিছুর সুস্পষ্ট জবাব রয়েছে আমাদের কাছে। আমাদের লুকোচুরির কিছু নেই।

আশা করছি, এবার তাদের এ সফর আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে। জিএসপি সুবিধায় আমরা আবারও ফিরে যাবো।
 
এ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া ১৬টি শর্তের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে তাদের কাছে। ১৫টি শর্ত এরমধ্যেই পূরণ করেছি আমরা। বাকি রয়েছে শ্রম বিধিমালা বিষয়ক শর্ত। সেটি এ সপ্তাহে পূরণ হওয়ার কথা। আইন মন্ত্রণালয়ে বিধিমালা পাঠানো হয়েছে ভেটিংয়ের জন্য। এরপর গেজেট প্রকাশ হলে কার্যকর প্রসঙ্গ।
 
জিএসপি ফেরাতে বাংলাদেশের আন্তরিকতা বর্ণনায় তিনি বলেন, এখানে শুধু একটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়টি বোঝাতে পারি, আমাদের শ্রম আইন যথেষ্ট শক্তিশালী। ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকেই এটি ভালোভাবে কার্যকর। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

‘সংবিধানেও এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের সংবিধানে এভাবে বর্ণিত নেই। তাই নতুন কোনো বিধিমালার আমাদের প্রয়োজন ছিল না। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত মানতেই নতুন এ বিধিমালাটি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এটির বাস্তবায়ন চায়। ’
 
ভিন্ন সূত্র জানায়, শুধু যে ইউএসটিআর প্রতিনিধিরাই আসছেন তা নয়, এ দল সফর শেষে ফিরে গেলে বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্য সচিবও যাবেন সেদেশে। তবে আগে যাবেন ব্রাজিল। সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রবর্তী দল হিসেবে যাবেন তিনি। তার সঙ্গে থাকবেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বসু।

ব্রাজিলের কাজ সেরে তারা যাবেন আমেরিকায়। সেদেশে বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট মিশনের সঙ্গে আলাপ করবেন। সেইসঙ্গে জিএসপি প্রসঙ্গে অগ্রগতি জানার চেষ্টা করবে এ ছোট্ট দলটি।
 
অবশ্য গত মাস পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ছিল- বাণিজ্য, শ্রম ও পররাষ্ট্র সচিবের সমন্বয়ে একটি টিম জিএসপি বিষয়ে সেপ্টেম্বরে আমেরিকা যাচ্ছেন। ১৬টি শর্তের অগ্রগতির রিপোর্টও তৈরি করা হয়েছিল আমেরিকা সফরকে কেন্দ্র করে। কিন্তু তিন সচিবের একসঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি এখন অনিশ্চিত। প্রতিনিধি দলের সফরের পরে আদৌ তার প্রয়োজনীয়তা থাকবে কিনা সেটিও এখন বিবেচ্য, মন্তব্য করেন এক কর্মকর্তা।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রটি জানায়, ইউএসটিআর প্রতিনিধি দলকে এ তিন সচিবই তাদের হোমওয়ার্ক অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করবেন। ফ্যাক্টরিসহ যা তারা দেখতে চান, যে বিষয়ে জানতে চান, সেসব জানাবেন।
 
জিএসপি সুবিধা দেওয়া ১শ ২২টি দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ যে এ সুবিধার জন্য অনেক বেশি যোগ্য, সেটি প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরা হবে। ১শ ২২টির মধ্যে ১০৫টি সভরেন কান্ট্রি, বাকিগুলো টেরিটরি। যদিও বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের পর এর প্রক্রিয়া বন্ধই ছিল, তবু সময় নষ্ট করার পক্ষপাতি নয় বাংলাদেশ। এখানে দেশের ইমেজের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ, বলেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।  
 
এ কর্মকর্তা বলেন, অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড আমাদের ফ্যাক্টরি দেখছে। অন্য কোথাও তা করতে পারে না। এতে বায়াররা আমাদের মার্কেটকে ম্যানিপুলেট করার সুযোগ পায়। দুই দশমিক নয় শতাংশ রেট কমিয়ে দিয়েছেন তারা।

‘এদিকে, ২০ শতাংশ ইউরো ডিভ্যালুট হয়েছে। রফতানি হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ইউনিট। তার মানে আয় তিন কোটির ঘর ছোঁয়নি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও বিজিএমইএ ও বাংলাদেশের অন্য সংগঠনগুলো জিএসপি সুবিধা ফেরত পাওয়ার আশা রাখছে। ’
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা জানান, তিন সচিব চলতি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে আমেরিকার দেওয়া ১৬ শর্তের সবকটি পূরণ হয়েছে বলে দেখাতেন তারা। কিন্তু ইউএসটিআর প্রতিনিধি দল আগেই আসছে বলে ঢাকাতেই হবে মূল কাজ।
 
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইউএসটিআর প্রতিনিধি দল আসছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি কখনো ছিল না, এবারও থাকবে না। এ আন্তরিকতা দেখে তারা নিশ্চয়ই পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করবেন।
 
রানা প্লাজা ধসে ব্যাপক হতাহতের পর ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি এখনও কার্যকর রয়েছে।

গত ২৯ জুলাই বিশ্বের ১শ ২২টি দেশ ও অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি পুনর্বহাল করা হলেও, বাংলাদেশের নাম নেই তালিকায়।
 
এরপর গত ১৮ আগস্ট সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটসহ কানাডার হাইকমিশনার বেনওয়া পিয়েরে লাঘামে, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হান ফুজল এসকায়ার এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধির বৈঠক হয়।
 
এতে বাংলাদেশকে দেওয়া ১৬ শর্ত বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র আরও অগ্রগতি দেখতে চায় বলে বার্নিকাট জানান।
 
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ শর্ত আমরা পূরণ করেছি। শ্রম আইনের বিধিমালার বিষয়টিও শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
এসকেএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।