ঢাকা: সবজি সরবরাহ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে সব ধরনের সবজির দাম।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর কাঁচাবাজারে কৃষক, ফড়িয়া ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত পাওয়া গেছে।
বাজারটিতে অন্যান্য সময়ে মধ্যরাতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। রাত ১টার পর কেউ এলে মালামাল রাখার জায়গা না পেয়ে ফিরে যেতে হতো। ট্রাক থেকে সবজি নামানোর জন্য শ্রমিকদের বেগ পেতে হতো। রাতভর চলত বেচাকেনা।
কিন্তু বৃহস্পতিবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাঝে মাঝে দুয়েকটি ট্রাক আসছে। খাঁ খাঁ করছে পুরো বাজার। আড়তদারও শ্রমিকের মজুরি দিতে পারছে না।
শফিক বাণিজ্য ভাণ্ডারের ম্যানেজার মো. আলী বাংলানিউজকে জানান, অন্য সময় জায়গা পাওনের জন্য ব্যাপারিরা ফোন কইরা বুকিং দিত। এখন কোনো কোনো দিন ফাঁকা পইড়া থাহে।
অন্য বছর এ সময়ে দৈনিক একশ’র বেশি ট্রাক আসতো। কিন্তু প্রায় একমাস ধরে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক সবজি আসে বলে জানান তিনি।
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আসা লাল শাক বিক্রেতা বুলবুল মিয়া বলেন, বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ায় অনেক সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। যে শাক আগে দুইশ’ টাকায় বিক্রি হতো সেটাই এখন আটশ’ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন সবজি চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। সেগুলো না আসা পর্যন্ত বাজারের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এসব সবজি বাজারে আসতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।
এদিকে কাঁচামরিচের ঝাঁজ এখন কমেনি। সরবরাহ খুবই কম। রাত দু’টা পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এ বাজারে কাঁচা মরিচের দেখা মেলেনি। সবজি বলতে লাউ, পেঁপে ও কাঁচা কলার সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। তবে দাম অনেক চড়া।
লাউ বিক্রেতা নূর আলম বাংলানিউজকে বলেন, কুষ্টিয়া থেকে লাউ এনেছি। বাজার পর্যন্ত আনতে প্রতি পিস লাউয়ের মূল্য ৪৮ থেকে ৫০ টাকা পড়ে গেছে। বিক্রি করছি ৫২ টাকা দরে।
কল্যাণপুর এলাকার এক খুচরা বিক্রেতা সেখান থেকে লাউ কিনছিলেন। দামের কথা জানতে চাইলে মুখে যেন কথার খই ফোটে। বলেন, পাবলিক আমাগো লগে চিল্লায়। ৫২ টাকা পিস কিনছি, ৬০ টাকায় বিক্রি করমু।
বাজারটিতে বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি কুমড়া (জালি), পটল, করলা, বরবটি ও কপির দেখা মিলেছে। তবে এসব সবজিরও সরবরাহ কম। পুরো বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফরিদপুর থেকে আসা আমড়া। এই একটি পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আমড়া বিক্রি হচ্ছে একশ’ থেকে ১২৫ টাকা।
রাজশাহীর সবজি ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় সব ধরনের সবজি হয়। কিন্তু এবার বন্যায় সব শেষ। প্রায় দেড় মাস ধরে সবজির বাজার চড়া রয়েছে। আর ২০ থেকে ২৫ দিন এই অবস্থা থাকবে। তারপর নতুন সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কমে যাবে। তার আগে দাম কমার সম্ভাবনা নাই।
একই কথা জানান মাগুরার সবজি ব্যবসায়ী সেলিম খানও। তিনি বলেন, বৃষ্টির লাইগা সব ফসল নষ্ট হইছে। যাও হইছে, তা দিয়া চলে না।
মিরপুর বাজারে সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে রাজধানীবাসীর অভিযোগ, খুচরা বিক্রেতারা কোনো সবজি কেজিপ্রতি ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না। তাদের কারসাজির কারণে সবজির দাম এতো চড়া।
কিন্তু ক্রেতাদের এ অভিযোগ আমলে নিতে রাজি নন খুচরা বিক্রেতারা। তারা বলছেন, পাইকারি বাজারেই দাম অনেক বেশি।
চলতি বর্ষা মৌসুমে সারা দেশেই বন্যা হানা দেয়। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়। এ বন্যায় নরসিংদী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা তলিয়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি না হতেই বন্যা হানা দেয় উত্তরাঞ্চলে।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় কৃষকের সোনার ফসল। এখনও গাইবান্ধা, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, রংপুরে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক এলাকার মানুষ মানবেতন জীবনযাপন করছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে। যে কারণে কৃষকের মাথায় হাত। বাজারে সবজির সরবরাহ কম। দামে আগুন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
এসআই/আরএম