ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাটভরা গরু আছে ক্রেতা নেই

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
হাটভরা গরু আছে ক্রেতা নেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: লম্বা দঁড়ির এক প্রান্ত গরুর গলায়। অপর প্রান্ত নিজের হাতে।

মুখে পান চিবোতে চিবোতে খোশগল্পে মেতে আছেন রফিকুল। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ীরাও যোগ দিয়েছেন সেই গল্পের আসরে। মাঝে মধ্যেই সেখান থেকে ভেসে আসছে অট্টহাসির শব্দ। ফাঁকে ফাঁকে গলায় থাকা রঙিন গামছা দিয়ে গরুর শরীরের মাছি তাড়াচ্ছেন। তারপর আবার মেতে উঠছেন গল্পে।  

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহীর সিটি বাইপাস পশু হাটে গিয়ে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য। হাটের যে দিকে নজর পড়ে কেবল গরু আর গরু। কিন্তু এর পরও জমে ওঠেনি কোরবানির পশু হাট। তাই পবা উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের রফিকুলের মতো অনেক ব্যবসায়ীরই এখন সময় কাটছে হাসি-ঠাট্টা করে।  

আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে রাজশাহীর হাটগুলোতে চলতি সপ্তাহে পশু সরবরাহ বেড়েছে দ্বিগুণ। হাটভরা গরু কিন্তু ক্রেতা নেই। পশু হাট জমে উঠতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। এজন্য আগামী শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

তাদের মতে, ভারতীয় গরু আসা নিয়ে রাজশাহী সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় এবার গ্রামে গ্রামে গরু পুষেছেন কৃষক পরিবারের লোকজন। তাই বাইরে থেকে না এলেও কোরবানির চাহিদা মেটাতে এখন দেশি গরু নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে পশু হাটগুলো। ফলে এবার কোরবানির হাট থাকবে দেশি গরুর দখলেই।  

সিটি হাটে আসা পবা উপজেলার নওহাটার পুঠিয়াপাড়া গ্রামের শামসুল হক জানান, তিনি ও তার স্ত্রী মিলে এবার দু’টি গরু পুষেছেন। ঈদের মৌসুমে তিনি গরুগুলো বিক্রি করতে চান। এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার গরু দু’টির দাম বলেছেন এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তবে তিনি দাম চেয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তার ধারণা, আগামী শুক্রবারের মধ্যে হাট জমে উঠলে প্রত্যাশিত দাম পাবেন তিনি। এজন্য পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে গরু বিক্রি করেননি। তাই ভটভটিতে করে নিয়ে এসে রোজ সিটি হাটে গরু তুলছেন। ক্রেতা না থাকায় আবার নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।    

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু জানান, এবার কোরবানির পশুর হাটে দেশি গরুর আমদানি বেশি। তবে গত কয়েক দিন ধরে ভারত থেকেও কিছু গরু আসতে শুরু করেছে। এখন ক্রেতা কম থাকলেও আগামী শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নাগাদ হাট পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তখন সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ীরাও নামবেন বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় দুগ্ধজাত খামার রয়েছে ৬০০টি এবং গরু পালনের খামার রয়েছে ২২১টি। ছাগলের খামার ২৭৭টি এবং ভেড়ার খামার রয়েছে ১৫৮টি। এসব খামার ও গৃহস্থ বাড়িতে পালন গরুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৯টি। ছাগলের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫টি, ভেড়া ৩৪ হাজার ২৩২টি এবং মহিষের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মীজানুর রহমান জানান, রাজশাহীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু রয়েছে। ফলে কোরবানির জন্য এবার দেশি গরুই চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কোথাও থেকে গরু না এলেও রাজশাহীতে এবার কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।