ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাটে ক্রেতা নেই, বিক্রেতা হতাশ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
হাটে ক্রেতা নেই, বিক্রেতা হতাশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: ঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকি। ঈদকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ জেলার নয়টি উপজেলায় বসেছে একাধিক কোরবানির পশুর হাট।

প্রতিদিন জেলার কোনো না কোনো এলাকায় এক বা একাধিক হাট বসছে। এ সব হাটে বিপুল পরিমাণ গরুর আমদানি হলেও বিক্রি হচ্ছে না তেমন।

হাটে প্রচুর লোকের সমাগম থাকলেও ক্রেতা কম, আর দাম কম হওয়ায় বিক্রিও কম হচ্ছে বলে বিভিন্ন হাট কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছেন। এতে এ জেলার ৪০ হাজার খামারি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন জেলার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জেলা সদরের কান্দাপাড়া, রতনকান্দি, সালুয়াভিটা, পৌর এলাকার মালশাপাড়া, শাহজাদপুরের তালগাছি, উল্লাপাড়ার বোয়ালিয়া, পাঁচিলিয়া, সলঙ্গা, কামারখন্দের বড়ধুল, জামতৈল, কাজিপুরের সোনামুখী, নাটুয়ারপাড়া, বেলকুচির সোহাগপুর, সমেশপুর, রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা, নিমগাছি ও তাড়াশের নওগাঁ নিয়মিত পশুর হাট ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে অন্তত আরও ৩০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।

প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে এ হাটগুলোতে জমজমাট কেনাবেচা হলেও এ বছর ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে।

রোববার বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলার বোয়ালিয়া গরুর হাট থেকে ফিরে আসছিলেন কামারখন্দ উপজেলার পাইকোশা গ্রামের আব্দুল হাকিম, সদর উপজেলার শিবনাথপুর গ্রামের বেপারী বাবলু শেখ, হামকুড়িয়া গ্রামের মতিউর, রাজাখারচর গ্রামের জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন ব্যাপারি ও খামারি।

তারা জানালেন, হাটে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর থেকে দু’একজন ব্যাপারি এলেও স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা কম। আর ক্রেতা না থাকায় গরুর দাম উঠছে না। এজন্য তারা গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কান্দাপাড়া পশুর হাটে দুপুর থেকে তীব্র গরম উপেক্ষা করে গরুর দড়ি ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ক্লান্ত শরীরে অবিক্রিত গরুটি নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন চন্ডিদাসগাঁতী গ্রামের প্রৌঢ় এনছাব আলী।

তিনি জানান, পালের এই গরুটি আড়াই বছর ধরে তিনি লালন-পালন করছেন। বৃহস্পতিবার জেলার সবচেয়ে বড় কান্দাপাড়া পশুর হাটে তুলে গরুটির দাম হাকেন দেড় লাখ টাকা। সারাদিনে তিন/চার জন ক্রেতা গরুটির দাম বলেন, মাত্র ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। গত আড়াই বছরে তিনি গরুটির পেছনে যে শ্রম আর অর্থ ব্যয় করেছেন তাতে এ দাম একেবারেই কম।

একই রকম কথা জানালেন, সদর উপজেলার বহুলী গ্রামের ইসলাম হোসেন, তিনি তিন বছর গরু লালন পালন করার পর হাটে তুলেছেন। ক্রেতারা কাঙ্খিত দামের চেয়ে অনেক কম বলায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলার শিবনাথপুর গ্রামের আবুল হোসেন, আব্দুল হাই, আড়িয়া মোহনের মহর আলী, শিলন্দার মমতাজ আলী, কামারখন্দ উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের আমজাদ হোসেন, খামার পাইকোশা গ্রামের আব্দুর রশিদসহ শত শত মানুষ।

এদের মধ্যে অনেক খামারিও রয়েছেন। শিলন্দার খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি সাতটি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন, এর মধ্যে মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলোর আশানুরুপ দাম উঠছে না। যে দাম হয় তাতে খরচের টাকাও উঠে আসবে না।

কান্দাপাড়ার ব্যাপারি শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে কান্দাপাড়া হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। তিনি জানালেন,  কাস্টমাররা যে দাম বলছে তাতে কেনা দামের থেকে প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম।

হাট কমিটির ইজারাদারাও স্বীকার করলেন আমদানি অনুযায়ী  বিক্রির পরিমাণ খুবই কম।

মালশাপাড়া হাটের ইজারাদার, ভুট্টো, কান্দাপাড়া হাটের ইজারাদার আকতার হোসেন মণ্ডল, সালুয়াভিটা হাটের ইজারাদার আবুল কাসেম ও রতনকান্দি হাটের ইজারাদার হাজী ইয়াকুব আলী বাংলানিউজকে জানান, হাটে যে গরু আমদানি হয়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ গরুও বিক্রি হয়নি।

কান্দাপাড়া হাটের ইজারাদার মো. আকতার হোসেন মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার হাটে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গরুর আমদানি হলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭৬০টি গরু।

মালশাপাড়া হাটের ইজারাদার ভুট্টো জানান, বুধবার এ হাটে প্রায় ৫ হাজার গরুর আমদানি হয়। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় আর দাম কম হওয়ায় এক হাজার গরুও বিক্রি হয়নি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল আলম আকন্দ বাংলানিউজকে জানান,  কোরবানিকে সামনে রেখে এ জেলায় এক লাখ ১০ হাজার গরু প্রস্তুত হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার খামারি এসব গরু উৎপাদন করেছেন। কিন্তু ক্রেতা সংকট থাকায় হাটগুলোতে এসব গরু বিক্রি হচ্ছে খুবই কম।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।