ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘড়িটির দাম কেন ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৫
ঘড়িটির দাম কেন ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা?

প্রশ্নতো উঠবেই। একটি ঘড়ির দাম যখন ৮ লাখ ১৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৪ টাকা), তখন গুটি কয় ধনীদেরও সেরা ধনী ছাড়া এ প্রশ্নতো যে কারোই মনে উদয় হবে।

আর ধনীরাও বুঝি একবার ভ্রু কুচকে ভাববেন, কিই আছে এই ঘড়িতে, যার জন্য এত দাম!

এত দামের ঘড়ি যে এর আগে ছিলো না, বা নেই তা নয়। তবে সেসব ঘড়ি থাকে মনি-মুক্তাখচিত। ফলে ওগুলোর দাম আলাদা করলে ঘড়ির দাম সাধারণের পর্যায়েই পড়ে যায়। কিন্তু এই ঘড়িতে নেই কোনও মুক্তা বা দামি রত্নের ব্যবহার।

যে ঘড়ি নিয়ে এত কথা সেটি বিশ্বখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা গ্রিউবেল ফোরসের তৈরি কোয়াড্রাপল টোরবিলন ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডে এদের চারটি মডেল বাজারে রয়েছে।

এই কোয়াড্রাপল টোরবিলন সুইজারল্যান্ডের লা চাক্স-ডি-ফন্ডসভিত্তিক ঘড়ি নির্মাতা গ্রুবেল ফোরসের সিগনেচার ওয়াচই কেবল নয়, এটি এই সময়ের বিরল পণ্যেরও একটি। ক্ষুদ্র কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাকাল একযুগও পেরোয়নি। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা। এরপর বছরে গোটা পাঁচ-ছয়ের বেশি কোয়াড্রাপল টোরবিলনের বেশি কখনোই বানায়নি।

তা সে যত কথাই হোক, কি এমন যে  শ’খানেক রোলেক্স কিংবা হাজার দশেক ক্যাসিও জি-শকসের দামে কিনতে হবে একটি ঘড়ি?

একই খরচে নিউ জার্সির সাবআর্বে পাঁচ শয়নকক্ষের বিশালাকারয় বাড়ি কিনে ফেলা যাবে, সে কথা না হয় নাই বললাম। বাংলাদেশে তো আস্ত একটা আট-দশতলা বাড়ি কেনা যাবে এই টাকায়।

তাহলে শোনাই যাক কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন স্টেফান ফোরসের কথা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো কেনো এই ঘড়ির এত দাম? আর তার উত্তর শুরু হয় ঘড়ির প্রকৌশলের দিকটি থেকে।

‘শুনলে ক্রেজি মনে হবে, স্রেফ আইডিয়াটা চূড়ান্ত করতে পাঁচ বছর নিয়েছি। এখানে দুটি টোরবিলনের খাঁচায় চারটি টোরবিলনকে স্থান করে দিয়েছি।

একেকটি টোরিবিলন আসলে একেকটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের বাক্স, যা আপনি সবচেয়ে সেরা ঘড়িগুলোতেই পাবেন। আর মধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পড়েও এই ঘড়ি কাজ করবে, আপনাকে সময় দেবে ঠিকঠাক।

চারটি ঘড়িকে একটির মধ্যে বসানো, আর সামান্যতম ফ্ল্যাকচুয়েশনও না রাখা একটা কঠিন কাজ বটে, বললেন ফোরসে।

বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়! অতএব বাইরে থেকে দেখে বুঝা যাবে না, যা কিছু প্রমাণ মিলবে এর পারফরম্যান্সে। সারা দিনে এই ঘড়িতে সময়ের হেরফের হয় মাত্র ২.৫ সেকেন্ড, অথচ সুইস যেসব নামিদামি ঘড়ির কথা শোনা যায় সেসব ঘড়িতে এই তারতম্য ১০ সেকেন্ডের কম নয়।

কোয়াড্রাপল টোরবিলন গল্পের সেরা অংশটিই এর প্রকৌশলের দিক, বলেন ফোরসে।

এই ঘড়ির মোট ৫৩৪টি কম্পোনেন্ট (যন্ত্রাংশ) রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩.৫মিলিমিটার থেকে শুরু করে মাইক্রোস্কোপিক স্ক্রু পর্যন্ত রয়েছে। একটি তার রয়েছে যা ০.৩৫ মিলিমিটার।

আর এইসব কম্পোনেন্টের অনেকগুলোই হাতে তৈরি যাতে সঠিক আকার আর মানটা নিশ্চিত করা যায়। অনেক দামি দামি সুইস ঘড়িতেও তা পাওয়া যাবে না।

আর একেকটি ঘড়ি তৈরিতে একবছরের সমান ম্যান-আওয়ার লেগে যাওয়ার পেছনে এটাই মূল কারণ।

আপনি যদি ঘড়িটির দিকে এক ফুট দূর থেকে তাকান, কোনও ম্যাগনিফাইং গ্লাস ছাড়া আপনি একটি মেশিনে তৈরি আর হাতে তৈরি ঘড়ির ফিনিশিংয়ের পার্থক্যটা ধরতে পারবেন না। এমনকি বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও তা কষ্টকর হয়ে যায়।

কিন্তু আরেকটু কাছে এসে দেখুন, গোটা বিষয়টিই পাল্টে যাবে। আপনার কাছে এই ঘড়িটির দিকে তাকানো আর একটি অসাধারণ তৈলচিত্র দেখতে থাকার অনুভূতি একই মনে হবে। আর প্রথম আপনার মনে হবে এটি একটি ছবি, কিন্তু আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলে আপনি এর কাজের খাঁটি দিকগুলো বুঝতে পারবেন।

আর ওই যে পায়ে হেঁটে পার হওয়ার ব্যারেল ব্রিজের মতো যে খাঁজগুলো দেখতে পাচ্ছেন, ওটি কাঠের বাক্স পলিশ করার কাঠি দিয়ে ঘষে ঘষে টানা ১৫ ঘণ্টা ব্যয় করে বানানো হয়েছে।

ওটির দাম কয়েক আউন্স সোনার দামকেও ছাড়িয়ে যাবে, কারণ ওর ওপরে কালো কুমিরের চামড়ার নির্যাস নিয়ে তা আঙুল দিয়ে ডলে ডলে ভেতরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এমন একটি ঘড়ি বানাতে যে মানসিক ধৈর্য্য, চিন্তাশক্তি আর উদ্ভাবন দরকার হয়েছে তার দাম অনেক।

ফোরসে ও তার অংশীদার রবার্ট গ্রুবেল তাদের ছোট্ট কোম্পানিতে বছরে বিভিন্ন মডেলের ১০০টির মতো ঘড়ি বানাতে শতাধিক জনবল নিয়োগ করেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন রয়েছেন যারা ঘড়ির কারিগরি দিকগুলোর কিছুই জানেন না, তাদের দক্ষতা হাতের কাজে।

ফোরসে বলেন, ১৮ জনের এই টিমটি তৈরি করতে আমাদের ১১টি বছর লেগে গেছে। শুরুর দিকে আমরা দক্ষ লোকই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মাত্র দুই তিনজনকে নিজে কাজ শুরু করতে হয়।

আর যদি আপনি কোয়াড্রাপল টোরবিলন তৈরিতে বিনিয়োগের দিকটি দেখেন, তা হচ্ছে আপনাকে চড়া মজুরি দিয়ে এই ধরনের কর্মী রাখতে হবে যারা সেরা জিনিষটি তৈরিতে তাদের আত্মনিয়োজনে প্রস্তুত থাকবে।

আমরা যদি ঘড়ির উৎপাদন দ্বি-গুন করে দিতে চাই তাহলে আমাদের ঠিক আরও ১৮ জন হাতের কাজের লোক খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু তেমন লোকই যে আর নেই, বলেন ফোরসে।   

বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।