ঢাকা, সোমবার, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মূল নকশার অভাবে আটকে গেল সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
মূল নকশার অভাবে আটকে গেল সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প

ঢাকা: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সচিবালয় নির্মাণ’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। লুই আই কানের মূল নকশা ঠিক রেখে আবারও পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।



লুই আই কানের মূল নকশা বাংলাদেশে না থাকায় প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একনেক সভা সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে লুই আই কানের অনুলপি নকশার ওপর নির্ভর করে। এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই আই কানের মূল নকশা নিয়ে আসতে হবে। কোনো অনুলিপি নকশার ওপর নির্ভর করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া যায় না।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পুনর্মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রকল্পটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের লুই আই কানের নকশা অপরিবর্তিত রেখে পরিকল্পনা তৈরি করে একনেকে আবার উত্থাপন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা থেকে লুই আই কানের প্রধান নকশা নিয়ে আসার নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মূল নকশা দেখেই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হবে।

একনেক সূত্র জানায়, একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের সচিবালয় স্থানান্তরের প্রকল্পটি তোলা হলে তা অনুমোদন দেয়নি কমিটি।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর আব্দুল গনি রোডের বর্তমান সচিবালয় কমপ্লেক্সে সম্প্রসারণের কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভুক্ত অনেক দফতর কমপ্লেক্সের বাইরে। বর্তমানে বাংলাদেশ সচিবালয় কমপ্লেক্স তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের সময় নির্মিত যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। এজন্য শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সচিবালয় নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে বৈঠকে তোলা হয়।

এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২শ’ ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সব টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে মেটানো হবে।
 
মূল কার্যক্রম
প্রকল্পের আওতায় ৩২ একর জায়গায় চারটি ব্লকে ভাগ করে জাতীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। দু’টি বড় ব্লকে ৩২টি বড় মন্ত্রণালয় ও দু’টি ছোট ব্লকে ১৬টি ছোট মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করা হবে। প্রকল্পের আওতায় অডিটোরিয়াম, সম্মেলন কেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, মসজিদ, কার পার্কিং ইত্যাদিও থাকবে।

অন্যদিকে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩শ’ ৯ দশমিক ৭১ বর্গমিটার মূল ভবন (চারটি ব্লক) ও ৫৪ হাজার ৫শ’ ৫ দশমিক ৮৮ মিটার অ্যাসোসিয়েট বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে (দু’টি ব্লক)।
 
মসজিদের আয়তন হবে ২৪ হাজার ৭শ’ ২৯ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। ৫৮ হাজার ৪৩ দশমিক ১৪ বর্গমিটার অডিটোরিয়ামসহ ১০ হাজার ৩৮ বর্গমিটার এনট্রান্স প্লাজা হবে। প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, পানি সরবরাহ, ১০টি সিসি টিভি ও ৩২টি লিফট কেনা হবে।

এছাড়া পাঁচ হাজার ১শ’ ৯৯ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে চিলার রুম ও এক হাজার ৭শ’ ৭২ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। বহির্বিদ্যুতায়নের জন্য পাঁচ হাজার ৮শ’ ৬২ দশমিক ২৪ বর্গমিটার এলাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

১৯৭৪ সালে ৪২ একর জায়গায় ১০টি ব্লকে চারটি নয়তলা ভবনসহ অফিস, ব্যাংক, অডিটোরিয়াম, মসজিদ, কার পার্কিং ইত্যাদি সম্বলিত জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের চুক্তি হয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ডেভিড উইজডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে এ চুক্তি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
 
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের নকশা স্থাপত্য অধিদফতর সংশোধন করেছে। কারণ, ইতোমধ্যে পূর্বের জমির পরিমাণ ১০ একর কমে গেছে। ওই জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

এখন ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ভাঙ্গতে হবে অথবা জিয়াউর রহমানের মাজার সরাতে হবে।

জিয়ার মাজার সরাতে হবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কার মাজার সরাতে হবে কি-না লুই আই কানের নকশা দেখেই বোঝা যাবে। লুই আই কানের মূল নকশা না দেখে এখন কিছুই বলা যাবে না। একটি মাজার না আরও মাজার আছে সেই বিষয়টি দেখতে হবে তবে মূল নকশা পযর্ন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
 
তিনি আরও বলেন, নকশার মূল কপি পেলে বোঝা যাবে যে, কার কোথায় মাজার আছে। লুই আই কানের নকশায় জিয়ার মাজার আছে কিনা আমরা জানি না।
 
সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমান মারা যান ১৯৮১ সালে। অন্যদিকে লুই আই কান নকশা প্রণয়ন করেন ১৯৭৪ সালে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, লুই আই কানের নকশায় জিয়ার মাজার ছিল না।

** একনেকে অনুমোদন পায়নি সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।