ঢাকা: দেশের বাইরে সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট দ্বারা বন্ধ রয়েছে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ রাখা হলেও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। তবে এ অর্থ বৈধভাবে না গিয়ে হুন্ডি অথবা অন্যকোন অবৈধ পথে যাচ্ছে। তাই বৈধভাবেই ব্যবসায়ীদের অন্যদেশে এফডিআই করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
বুধবার (২১ অক্টোবর) ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।
‘ওভারসিস ইনভেস্টমেন্ট বাই বাংলাদেশি এন্টারপ্রেনার্স’ শীর্ষক সভাটি অনুষ্ঠিত হয় আইবিএফবি’র তেজগাঁয়ের কার্যালয়ে।
সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। যে কারণে সরকার শিল্প খাতে নতুন করে গ্যাস না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে দেশে বিনিয়োগ নিয়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যাবে কীভাবে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
তারা বলেন, বাইরের দেশ নিজেদের পণ্যের প্রচার ও বেশি দাম পাওয়ার জন্য বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে দেশে লাভসহ অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ীরা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, আমি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে না। তবে দেশের ভিতর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। তাই এফডিআই’র বিকল্প হিসেবে দেশে বস্ত্র খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়া সম্ভব হলে, বিদেশে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ আনতে যে সময় লাগবে, দেশে বিনিয়োগ করে তার থেকে কম সময়ে লভ্যাংশ পাওয়া সম্ভব হবে।
অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কাজে লাগিয়ে সরকারকে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কয়লা দিয়ে। গ্যাস দিতে হবে শিল্প খাতের উন্নয়নে।
তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ আর সেই বাংলাদেশ নেই। যারা বাংলাদেশ নিয়ে নানা সমালোচনা করতেন তাদের কাছেও বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন আর বিস্ময়ের কিছু না। এখন বাংলাদেশে ৫৪ হাজার কোটিপতি। যা প্রতি বছর ৫ হাজার করে বাড়ছে।
আমাদের এ মিছিলে সামিল হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের দাবি থাকে তৃতীয় কোন দেশ থেকে রফতানি করার সুযোগ থাকতে হবে। তা না হলে তারা দাম বাড়াতে চায় না।
তিনি বলেন, সরকার বলছে ১৫ বছর পর দেশে গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। এ জন্য শিল্প খাতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭৪ শতাংশ গ্যাস দিয়ে করা হয়।
তিনি বলেন, দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ, কয়লার বিষয়ে কোন সঠিক পরিকল্পনা নেই। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই দেশের ভিতরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্ধকারে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবো কি ভাবে?
তবে আমরা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে আমরা মুনাফাসহ দেশে ফিরিয়ে আনবো। এখন সরকারের উচিত আমাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। যদি আমাদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে না দেওয়া হয়, তবে আমরা অভ্যন্তরীণ বাজারেও মার খাবো।
আইবিএফবি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সহ-সভাপতি হুমায়ন রশিদ, আইবিএফবি’র পরিচালক এম এস এস সিদ্দিক, দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর শওকত হোসেন মাসুম, ইত্তেফাকের বিজনেস এডিটর জামাল উদ্দিন, ডেইলি সান এর বিজনেস এডিটর গোলাম শাহানি প্রমুখ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
এএসএস/আরআই
