ঢাকা: ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুনে তাজরীন ফ্যাশনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১১১ জন পোশাক শ্রমিক।
মঙ্গলবার সকালে জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের স্বজনদের ছাড়া দেখা মেলেনি কারো। এমনটাই জানিয়েছেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারী শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে কালো কালিতে লেখা হয়েছে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের কথা। আজও ২৪ নভেম্বর শ্রমিকরা কেঁদে উঠেন নিহত সহকর্মীদের কথা স্মরণ করে। কিন্তু মালিকদের সে বিষয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজকের দিনটি মালিকরা বেমালুম ভুলে গেছে তাজরীনে নিহত শ্রমিকদের কথা। নিহত শ্রমিকদের কথা স্মরণ করে কোথাও মালিকরা মিনিমাম শ্রদ্ধা নিবেদন পর্যন্ত করেননি। অন্যদিকে তোবা গ্রুপের মালিক দোলোয়ার ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন বুক ফুলিয়ে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। আমরা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেলোয়ার হোসেনের ফাঁসি দাবি করছি।
তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের তিন বছরের দিনটিতে বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকেও কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন বা স্মরণ সভার আয়োজন না করার কথা স্বীকার করেছেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুখ হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তিন বছর আজ। আজ আমাদের এ বিষয়ে কোনো অনুষ্ঠান বা স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়নি। কিন্তু তাজরীনের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে আমরা পুরো বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের সব কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তাজরীনের শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রকারের ক্ষতিপূরণের সাড়া দেয়নি কারখানাটিতে জড়িত বিশ্বের অন্যতম ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের পর গত তিন বছরের বিভিন্ন সময় মালিকপক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ থেকে ওয়ালমার্ট এর কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য আলোচনা করলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তার সাড়া দেয়নি।
তবে সম্প্রতি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, আইএলও ও বাংলাদেশ সরকারের সমন্বয়ে গঠিত তাজরীন ক্লেইমস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রাস্ট (টিসিএ ট্রাস্ট) থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তাজরীনের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা পাবেন বলেও ট্রাস্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসাব মতে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হন। এর মধ্যে ১০৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হলেও বাকিদের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত হওয়া নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সাত লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
ইউএম/আরআই