ঢাকা: বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্র মৎস্য চাষি, জেলে ও সবজি উত্পাদনকারীরা প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদিত পণ্যের পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম।
মঙ্গলবার রাজধানীর উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার ব্যবস্থার ওপর তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএএস মুরশিদ।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি খুব জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। এ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। প্রয়োজনে বড় উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এ উদ্যোগে। তারা কৃষকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কৃষকের উত্পাদিত পণ্য একটি নির্দিষ্ট দামে কিনে তা বাজারজাত করবে। এতে কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে। কারণ এখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে কৃষক রেহাই পাবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তিনি তিনটি সুপারিশ করেন। এর মধ্যে রয়েছে- বাজারে বড় উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা, প্রতিষ্ঠিত বড় উদ্যোক্তাদের কৃষি খাতে বিনিয়োগে উত্সাহিত করা এবং বড় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্ষুদ্র উত্পাদনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করা।
আরেকটি প্রবন্ধে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো পিটার ডেভিস দারিদ্র্য দূরীকরণে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সরাসরি আর্থিক সহায়তায় কিভাবে কৃষকরা অর্থনীতির মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তা তুলে ধরেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি এসএমই উদ্যোগের সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অন্য একটি প্রবন্ধে মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, পাঁচ স্তরে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুফে নিচ্ছে। এতে করে উৎপাদনকারী প্রকৃত ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উত্পাদকারী দেশ। কৃষকের পণ্যের উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার ব্যবস্থা চালু করার পাশাপাশি সবজি রফতানি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমএ সাত্তার মন্ডল বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজার সম্প্রসারণের কৌশল কি হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আর তার মাধ্যমে গরিব মানুষের জন্য কতটা কল্যাণ আনা সম্ভব হবে তাও ভাবতে হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের নিজেদের উদ্যোগে ফসলের বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করে তাদের এ উদ্যোগে সরকার সরাসরি কিভাবে সহায়তা দিতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র মাছচাষি ও ক্ষুদ্র মাছ শিকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। তবে এগুলো সাময়িক ব্যস্থা। স্থায়ীভাবে মাছ শিকারী ও কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে কৃষিপণ্যের বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক কৃষিপণ্যের উদ্বৃত্ত উত্পাদন আছে। যেমন বছরের একটা সময় গ্রাম পর্যায়ে টমেটোর তেমন চাহিদা থাকে না। ফলে কৃষক ক্ষেত ছেড়ে দেন। কারণ ওই সময়ে টমেটো তুলে শ্রমিক খরচই উঠে না। তাই এই টমেটো সংরক্ষণ করে বছরের অন্য সময় বাজারজাত ও সসের মতো বিকল্প ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
এমআইএস/আরআই