বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে: বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত ব্যাংকিং মেলায় নিজেদের কর্মজীবন ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন দেশের সফল কয়েকজন কৃষক।
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা নিজেদের কথা তুলে ধরেন।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় ব্যাংকিং মেলা ২০১৫ এর শেষে দিনে ‘ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে মেলা কর্তৃপক্ষ।
সেমিনারে কথা বলেন দেশের প্রথম সফল পাম চাষি মো. মঞ্জুর হোসেন। কুমিল্লা থেকে আগত ওই কৃষক জানান, ৭ বছর বয়স থেকে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ১৪ বছর বয়সে ড. আক্তার নামে একজন তার নাম দেন কৃষক মঞ্জুর। আর এখন তিনি পরিচিত পাম মঞ্জুর হিসেবে।
কুমিল্লায় নিজস্ব জমিতে পাম চাষ করেন মঞ্জুর। পাম চাষ করে নিজে সাবলম্বী হয়েছেন একই সঙ্গে বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।
ব্যাংক ঋণ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে এই চাষী বলেন, কৃষকদের ঋণ পরিশোধের হার ৯৫ শতাংশের উপরে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকেরই তথ্য। অথচ একজন কৃষক কোনো কারণে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে তার মাজায় দড়ি বেঁধে ধরে আনা হয়। অথচ যারা হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে যায় তাদের কিছু হয় না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত। কৃষকরা যাতে আরও সহজে ঋণ পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা উচিত।
বসত-ভিটা ছাড়া নিজের কোনো আবাদি জমি নেই মানিকগঞ্জের হাবিবুর রহমানের। তিনি বলেন, প্রথমে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে গরুর বাছুর কিনি। এরপরই বদলাতে থাকে জীবন।
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন হাবিবুর রহমান। সেই ঋণের টাকায় চলছে গবাদি পশু পালন। গরুর দুধ বিক্রি করেই নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন মানিকগঞ্জের এই কৃষক। তার কথায় এক সময় সংসারে অভাব ছিলো। এখন জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
আকেকজন সফল চাষি কামরুন নাহার শাহানা। শুটকি মাছের ব্যবসা করে চলে এসেছেন দেশের সফল কৃষকদের তালিকায়। শুটকি ব্যবসার বিষয়ে কামরুন নাহার বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে কিছু করার ইচ্ছা ছিলো। সেই ইচ্ছা থেকে শুরু শুটকি ব্যবসা।
শুটকি মাছের ব্যবসার মাধ্যমে নিজে যেমন সাবলম্বী হয়েছেন তেমনি জেলেরাও পাচ্ছেন মাছের ন্যায্য দাম। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যে মাছ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়, সেই মাছ ৪ কেজি শুটকি করলে হয় ১ কেজি। যা বিক্রি হয় ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকায়। অথচ এই ৪ কেজি মাছ কাঁচা বিক্রি করলে মিলতো বড় জোর ১২০ টাকা।
শুটকি ব্যবসায়ী শাহানা আরও বলেন, শুটকি ব্যবসায় ব্যাংকের আরও বেশি সহায়তা পেলে গার্মেন্টস ব্যবসার মতোই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক খাত হয়ে উঠবে শুটকি খাত।
লিচু চাষি আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল লিচু চাষ করে হয়েছেন সাবলম্বী। সাধারণের কাছে তিনি এখন পরিচিত লিচু কিতাব হিসেবে। তিনি বলেন, আমি শুধু আমার একার সফলতায় খুশি নই। আমি চাই আমার মতো দেশের প্রত্যেক জেলায় একজন করে হলেও লিচু কিতাব থাকুক।
কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে নিজের জীবনে পরিবর্তন করেছেন ঝিনাইদহের মরজিনা বেগম। তিনি বলেন, যে কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাদের মোবাইল নম্বর ব্যাংকের কাছে থাকে। মাসে অথবা দুই মাসে একবার ব্যাংক ও কৃষকদের মতবিনিময় করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এতে কৃষকদের কী কী সমস্যা হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল হই তখন ব্যাংকগুলো আমার কাছে আসে। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয় যখন কেউ ফুটে উঠে তখন সবাই তার কাছে আসে। কিন্তু যখন সমস্যায় পড়ে তখন কাউকে পাওয়া যায় না।
আরেকজন ভার্মি কম্পোস্ট চাষি মমতাজ। তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য হলো ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। ভার্মি কম্পোস্ট হলো এমন সার যা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। এতে কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ নেই। এটি ভেজাল মুক্ত খাবার উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চা ষ ময়েজ, কৃষকদের কাছে যিনি কুল ময়েজ হিসেবে পরিচিত। কুল চাষে নিজের সফলতার কথা জানান যশোরের এই কুলচাষি। একটি কুলের ওজন আড়াই’শ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার গল্পও শোনান তিনি।
সেমিনারের শেষ অংশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী বলেন, ব্যাংক খাতে যে অর্জনগুলো হয়েছে তা জানান দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ব্যাংক মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কী কী সমস্যা হয়েছে সে বিষয়গুলো জানাও এই মেলার উদ্দেশ্য।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে কৃষকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন তাদের একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। কীভাবে ঋণের টাকা ব্যবহার করবেন এবং কীভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবেন তার সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
এএসএস/এসই/এমজেএফ
** ব্যাংকিং মেলায় দর্শক মাতালেন কুদ্দুস বয়াতি
** সমাপনী সংবাদ সম্মেলন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক