ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

বছরে ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি: এনবিআর চেয়ারম্যান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
বছরে ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি: এনবিআর চেয়ারম্যান এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান

ঢাকা: রপ্তানিকারকদের দেয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার বড় অংশই অপব্যবহার করে আমদানিকৃত কাঁচামাল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়, বললেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।

একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।

এ রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে এনবিআর সমপ্রতি বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

পণ্য তৈরি করে রপ্তানির শর্তে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পান রপ্তানিকারকরা। এসব কাঁচামাল সরকার অনুমোদিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউজ) রাখতে হয়। এটিকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা বলা হয়। স্থানীয় বাজারে ওই কাঁচামাল কিংবা তৈরি পণ্য বিক্রি করা যায় না। কিন্তু এ সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি এনবিআর বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা হিসাব করে দেখেছেন, যে পরিমাণ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হয় তা ঠেকানো গেলে বছরে দুটি পদ্মা সেতুর সমপরিমাণ অর্থায়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ফাঁকি ঠেকাতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগকে শক্তিশালী করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন। সমপ্রতি খুলনার একটি প্রতিষ্ঠানের এ প্রক্রিয়ায় ২৫৮ কোটি টাকা ফাঁকি ধরতে সমর্থ হয়েছেন কর্মকর্তারা। এ জন্য কর্মকর্তাদের উপর প্রাণনাশের হুমকিও ছিল।

তিনি বলেন, ফাঁকিবাজদের সতর্ক করে দিতে চাই। রাজস্ব পরিশোধ করুন। ফাঁকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করা হবে। তবে অযথা কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেটিও খেয়াল রাখা হবে।

এ সময় তিনি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতি, এনবিআরে সুশাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, ব্যবসায়ীদের হয়রানি, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, রাজস্ব আদায়ে নানামুখী উদ্যোগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থান, করদাতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা, এনবিআরে কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিতে স্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করেন।

এনবিআর কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ ইদানিং বেশ আলোচিত হচ্ছে। একাধিক ফোরামে ব্যবসায়ী নেতারা সমপ্রতি বেশ জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু কর্মকর্তা লোভের বশবর্তী হয়ে এ কাজ করছে। এতে অসত্ ব্যবসায়ীদেরও যোগসাজশ রয়েছে। তবে উভয়ের মধ্যকার যোগাযোগ কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে হয়রানিও কমে আসবে।

নজিবুর রহমান বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) থেকে আমরা এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) প্রবেশ করেছি। এসডিজি’র অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের নিজস্ব সম্পদ বাড়ানো এবং এর সঠিক ও দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা। অন্যদিকে দিন দিন বৈদেশিক সহায়তার প্রবাহও কমে আসবে। এ জন্য নিজস্ব সম্পদ বাড়ানোর বিকল্প নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্থাত্ রাজস্ব যোগান দিতে এনবিআর সরকারের অন্যতম ভরসা। সে জন্য এখানে সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দেশের ৯০ শতাংশ কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি এনবিআরকে সম্প্রসারণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন।

চলতি অর্থবছর রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে এনবিআরকে। গত অর্থবছরের আদায়ের চাইতে প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক ও অন্যান্য খাতের কর থেকে। ইতিমধ্যে অর্থবছরের ৫ মাস পার হয়েছে। এনবিআরের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব আদায়। এ জন্য আমদানি-রপ্তানি তুলনামূলক কম হওয়া, ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন কাঙ্খিত পরিমাণে না হওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব বকেয়া পড়ে আছে। তিনি বলেন, অর্থবছরের বাকি সময়ের মধ্যে এ অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ আদায়, রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বড় অঙ্কের রাজস্ব উদ্ধার, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কার্যকর করা, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কর্তনের বিধান সক্রিয় করা এবং রাজস্ব আদায়কারী কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়বে।

অন্যদিকে আগামী মাসগুলোতে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে বছর শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

রাজস্ব কাঠামো সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি। তিনি বলেন, আয়করদাতা বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় জরিপ কার্যক্রম চালানো হবে। এ জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে ফ্ল্যাট বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও জরিপ চালানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
একেএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।