ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘দুশ্চরিত্রের সূচনা বন্ধ করবে কাস্টমস’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
‘দুশ্চরিত্রের সূচনা বন্ধ করবে কাস্টমস’ ছবি :শাকিল / বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

ঢাকা: মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কাস্টমস সংকুচিত হলেও কাস্টমস বিভাগ দুশ্চরিত্রের সূচনা বন্ধ করতে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
 
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।


 
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
 
‘ডিজিটাল কাস্টমস: প্রোগেসিভ এনগেজমেন্ট’ স্লোগানে বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৭৯টি দেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
 
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব যখন মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছে, তখন ভাবতে হবে, শুল্ক বিভাগের কি কাজ রয়েছে। শুল্ক বিভাগ বিদায় হবে না। যেগুলো সমাজের জন্য ভালো নয়, দুশ্চরিত্রের সূচনা করতে পারে, ইন্ধন দিতে পারে তা রোধ করবে শুল্ক বিভাগ।

‘যতোই আমরা মুক্তবাজারের দিকে যাবো, ততোই শুল্ক বিভাগের কাজ কমে যাবে। কিন্তু শুল্কের নির্দিষ্ট যে ক’টি ক্ষেত্র রয়েছে, তাতে আরো বেশি নজরদারি ও শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
 
এডিআর সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় সহজ ও বিরোধ মীমাংসা করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সুযোগটি কেন গ্রহণ করা হয়নি ব্যবসায়ী ও করদাতাদের প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, সুযোগটি গ্রহণে কি অসুবিধা, কেন সুযোগটি নিচ্ছেন না?
 
প্রক্রিয়াটিকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে এনবিআরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি আকর্ষণ করা যায়।
 
সুযোগটি গ্রহণ ও প্রচার করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন অর্থমন্ত্রী। এর মাধ্যমে কাস্টমসের প্রোগেসিভ এনগেজমেন্টের যথেষ্ট প্রসার ও রাজস্ব আদায় বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
 
মে মাসের মধ্যে নতুন শুল্ক আইন সংসদে উপস্থাপন করা হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইনটি যাতে গ্রহণযোগ্য ও আইনের যাতে সংশ্লিষ্টদের যেসব অভিযোগ থাকে তার নিরসন হয় সেজন্য জানাতে পারবেন।
 
একই সঙ্গে আইনটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা, আইনটিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে চান তারা, প্রথম ধাপে সে পরামর্শ করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন মুহিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশের যেসব কোটিপতি কর আওতার বাইরে তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে এনবিআরকে অনুরোধ জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ায় বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়েও করদাতা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে যারা কর দেন শুধু তাদের নয়, নতুন নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে হবে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, সেক্ষেত্রে উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও কোটিপতি পাওয়া যাবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, দেশে কোটিপতি রয়েছেন এক লাখের ওপরে। তাদের মধ্যে যারা এখনও কর দেন না, তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করতে হবে। যারা কর দেন, তাদের ওপর বোঝা বাড়াবেন না। কর আদায়ের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ করতে হবে উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, ডব্লিউওটি এর আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও পৃথিবীর সব দেশ নিজ দেশের শিল্প সংরক্ষণ করে। আমাদের শিল্পও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসায়ীদের যতো সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত নিরসন করা হয়, হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বাঁচার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন, আর উন্নয়নের জন্য রাজস্ব। সেজন্য রাজস্ব উন্নয়নের অক্সিজেন। সরকারের উন্নয়ন অংশীদার হতে ও ভিশন বাস্তবায়নে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
 
তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণে গতিশীলতা আনতে আয়কর, শুল্ক ও মূসককে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের পার্টনারশিপ করতে সংলাপ করা হচ্ছে।
 
পার্টনারশিপে কাজ করে রাজস্ব বাড়াতে চাই, কর নিয়ে আমরা আর মামলা করতে চাই না বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
 
এডিআর জোরদার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিরা পরামর্শ দিয়েছেন। এতে কিছুটা পরিবর্তন এনে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
 
এনবিআরের সকল আইনকে নবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে করভার নয় করনেট বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
 
জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। এতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করা হবে। আয়কর আইনকে যুগোপযোগী করতে এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সভায় ব্যবসায়ীদের অসৎ কালচার ত্যাগ করে বুক ফুলিয়ে বাঁচার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাংক ঋণ ও এনবিআরের মামলায় আটকে থাকা ৩১ হাজার কোটি টাকার মতো বর্তমানে দু’টি বড় ক্যান্সার বিরাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

হতাশা জানিয়ে মাতলুব আহমাদ বলেন, মাঝে মাঝে দেখি কন্টেইনারের মধ্যে হ্যামার গাড়ি। লজ্জা লাগে। ব্যবসায়ীরা অসৎভাবে কেন এ কাজ করবেন?
 
তিনি বলেন, কারো যদি হ্যামার গাড়ি চালাতেই হয় তাহলে বেশি আয় করেন, বেশি করে কর দেন, গাড়ি কেনেন, বাধা দেবে কে?
 
তিনি বলেন, অসৎ এ কালচার পরিবর্তন করতে হবে। সচেতন হতে হবে। ভ্যাট, ট্যাক্স ও শুল্ক দিয়ে স্বচ্ছ হতে হবে, বুক ফুলিয়ে বাঁচতে শিখতে হবে।

মাতলুব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দু’টি বড় ক্যান্সার বিরাজ করছে। প্রথমত প্রায় ৬০ হাজার নন-পারফরমেন্স (খেলাপি ঋণ) ব্যাংক লোন।
 
দ্বিতীয়ত এনবিআর ব্যবসায়ীদের কাছে কাস্টমসসহ বিভিন্ন কর হিসেবে মামলায় ৩১ হাজার কোটি টাকা পাবে। এটা যেকোনো ভাবে পরিশোধ করতে হবে বলে জানান তিনি।
 
এনবিআরে ফ্রি ইম্পোর্টস অ্যাসেসমেন্ট ডেস্ক করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানি করার অাগেই ওই পণ্যের নমুনা দেখে নির্ধারণ করতে হবে পণ্যে ট্যাক্স কতো হবে। এরপর আমাদের আর হয়রানি করা হবে না।
 
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক ও শুল্কনীতি সদস্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে কাস্টমস ও ব্যবসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৫ জন কর্মকর্তা ও পাঁচজন ব্যবসায়ীকে সার্টিফিকেট অব মেরিট সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।