ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মীনাবাজারে অনিয়ম: ধানমণ্ডি

শনিবারের মাংস বিক্রি সোমবারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
শনিবারের মাংস বিক্রি সোমবারে

ঢাকা: ‘রোববারে গরু জবাই হয় না। তাই শনিবারে (০৬ আগস্ট) জবাই করে প্যাকেটজাত করা হয়।

আর সে প্যাকেটজাত মাংসের মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ হচ্ছে সোমবার (০৮ আগস্ট) পযন্ত। ভালো মাংস। কোনো সমস্যা নেই। ’
 
রোববার (০৭ আগস্ট) ধানমন্ডির (৯এ) মীনাবাজারের আউটলেটে দুপুর বারোটার দিকে এক ক্রেতার কাছে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন একজন বিক্রয়কর্মী। যদিও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৩ জুন সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ও হিমায়িত মাংস বিক্রির অপরাধে মীনাবাজারের আরেকটি আউটলেটকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিশেষ অভিযানে এ জরিমানা করা হয়।
 
পরে ওই  ক্রেতা ৬ তারিখ দেখে আর মাংস ক্রয় করেননি।  
 
শুধু মাংসই নয়, বিএসটিআইয়ের সিএম লাইসেন্স ছাড়া মধু, আফটার শেভ লোশন, ন্যুডলস, জুস, সাবানও বিক্রি করে আসছিল মীনাবাজার। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চলতি বছর মীনাবাজারের বিভিন্ন আউটলেটকে অন্তত চারবার জরিমানা করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও ১১ মে একবার মীনাবাজারের শান্তিনগর আউটলেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
 
পরে ২৬ জুন র‌্যাব-২ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত, ৪ আগস্ট ৫ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন-৫), ঢাকা জেলা প্রশাসক ও বিএসটিআইয়ের যৌথ টিম এবং ১৩ জুন ডিএনসিসি মীনাবাজারের বিভিন্ন আউটলেটে অভিযান চালায়।
 

 
‘ভোক্তা অধিকার আইন, নিরাপদ খাদ্য আইনসহ বিভিন্ন আইন থাকার পরও একই অপরাধ বার বার তারা কেন করছে?’--- এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্তদের অধিকাংশই আপিল করে  খালাস পেয়ে যায়। আপিলে খালাস পেলে আল্টিমেটলি সংশ্লিষ্টদের জরিমানা আর বহাল থাকে না। এ কারণে তারা বারবার অনিয়ম করতে উৎসাহিত হচ্ছে। আপিল অথরিটির বিষয়টি সতর্কভাবে দেখা দরকার তারা যেন রেহাই না পেয়ে যায়। যদি রেহাই না পায় তাহলে অনিয়ম করার প্রবণতা কমবে। ’’
 
তিনি আরও বলেন, ‘‘খাদ্যে ভেজাল ‘রাইট টু লাইফ’ বা বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করে। এখানে জরিমানা করাটা বড় বিষয় নয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরাসরি মামলা দিতে হবে। এটা অজামিনযোগ্য। তাহলে অনিয়ম কিছু কমে আসবে। ’’  
 
নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবী  সৈয়দ মহিদুল কবির বাংলানিউজকে  বলেন, ‘‘২০১৩ সালে আমরা এ  বিষয়ে রিট পিটিশন করি। এর গেজেট নোটিফিকেশন হয় ২০১৫ সালে। বিধিমালা করা হলো তারও আগে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো কাজ করছে না। আমার রিটটি এখনো পেন্ডিং পড়ে আছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ১৩ সদস্যের কমিটিও আছে। কিন্তু তারা খাদ্য আদালত গঠনের ব্যাপারে কাজ করছে না। আবার নরমাল যে প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে সেটাও ব্যবহার করছে না। এসব কারণে বিভিন্ন জায়গায় সমন্বয়হীনভাবে জরিমানা হচ্ছে। খাদ্য কর্তৃপক্ষ আছে এবং তাদের মাসিক মিটিং করার কথা। কিন্তু তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে মোবাইল কোর্ট একজনকে দুইবার জরিমানা করছে । আবার কাউকে কাউকে করছে না। ’’  
 
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি মীনাবাজারের ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন এক্সিকিউটিভ মেহেদী হাসান।
 
প্রসঙ্গত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৩৭ ধারা অনুসারে ‘‘কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎ‍পাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’’
             
ধারা ৪৩ অনুসারে ‘‘কোন ব্যক্তি মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যাহা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’’
             
             
৫৫ ধারা অনুসারে ‘‘এই আইনে উল্লিখিত কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড রহিয়াছে উহার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ৷’’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮,২০১৬
ইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।