ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ট্যানারি শ্রমিকরা

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ট্যানারি শ্রমিকরা

ঢাকা: হাতে ঘা (ক্ষত) নিয়ে নোয়াখালী ট্যানারির পাশের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন মো. হাজী মকবুল (৪৮)। দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে ট্যানারিতে কাজ করছেন তিনি।



হাতের ক্ষত প্রসঙ্গে মকবুল বাংলানিউজকে বলেন, ট্যানারির কাজে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। কারণ, এখানে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। তা থেকে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। হাতের এই ঘা (ক্ষত) তারই প্রমাণ।

রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারে অসহনীয় দুর্গন্ধের মাঝে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন শ্রমিকরা। তাদের হাতে গ্লাভ্‌স নেই, মুখে নেই কোনো মাস্ক। কেমিক্যাল থেকে রক্ষা পেতে শরীরে নিরাপত্তা সহায়ক ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও তা নেই শ্রমিকদের।
হাজারীবাগ ট্যানারিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ড্রেনের কেমিক্যালযুক্ত দূষিত পানি উঠে গেছে রাস্তায়। ফলে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আরো বেশি।
অসুস্থ হলে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছেন না ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকরা।
হাজারীবাগের ২০৫টি ট্যানারির প্রায় সবগুলোতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহার করা হয় চুন, সোডিয়াম, সোডা, লাইবিন অবজেলিক, নিশা ফল, গরম অ্যাসিড, ফরমেট অ্যাসিড, লবণ, সিইও, হাইফু, কুরুম, সোডিয়াম ফরমেট, বুশান থার্টিয়েল, টেনবেসের মতো বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল।
মকবুল বাংলানিউজকে বলেন,  ট্যানারির তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পান। তবে মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেন না তারা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
আরব ট্যানারির শ্রমিক মো. ইউসুফ (৪০) কাজ করেছেন ১৭ বছর ধরে। শরীর বেশি ভালো নেই আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন,  ‘প্রথমদিকে  ট্যানারিতে কাজ করতে অনেক কষ্ট হতো। মাঝে মধ্যে বমি হতো, তেমন খেতেও পারতাম না। সারা শরীরে চুলকানিও হতো। চুলকাতে চুলকাতে ঘা হয়ে যেতো শরীরের বিভিন্ন স্থানে। একবার ক্ষত ভালো হতে তাকে বিশ্রামে থাকতে হয়েছিলো চার মাসেরও বেশি সময়।   কিন্তু মালিক অথবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাইনি’।    

তিনি আরো বলেন, ‘কাজ করতে করতে এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কেমিক্যালের বিষাক্ত গন্ধেও দেহে বাসা বেঁধেছে রোগ-বালাই। প্রতিদিন দুইশ’ টাকার ওষুধ খেতে হয়। তারপরও কাজ করতে হচ্ছে পেটের দায়ে। কেননা, আমার ওপরই নির্ভর করে সংসার’।
আরব ট্যানারি লিমিটেডের মালিক হাজী ইলিয়াছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাতের গ্লাভ্‌স, মুখের মাস্ক ও শরীরে ব্যবহারের জন্য নিরাপত্তা সহায়ক ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকরা সেটা ব্যবহার করেন না। শ্রমিকরা বলেন, ওগুলো পরে নাকি ভালোভাবে কাজ করা যায় না। এজন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা জেনেও নিরাপত্তা সহায়ক ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করেন তারা’।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একথা সত্য নয়। যারা বলছেন, তারা না জেনেই কথাগুলো বলছেন’।
তবে সব কারখানায় শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬
এসজে/এএসআর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।