ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আইন লঙ্ঘনে গ্রামীণ টেলিকমকে শ্রম কল্যাণ তহবিলের চিঠি

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
আইন লঙ্ঘনে গ্রামীণ টেলিকমকে শ্রম কল্যাণ তহবিলের চিঠি

শ্রম আইন অনুসারে কর্মীদের প্রায় ১০৮ কোটি টাকা পাওনা না দেওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দিয়েছে শ্রম কল্যাণ তহবিল। গত ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক চিঠিটি দেওয়া হয়।

ঢাকা: শ্রম আইন অনুসারে কর্মীদের প্রায় ১০৮ কোটি টাকা পাওনা না দেওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দিয়েছে শ্রম কল্যাণ তহবিল। গত ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক চিঠিটি দেওয়া হয়।


 
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশের অধিকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা। গত ১০ বছরে এমন প্রায় ১০৮ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকম।   তারা শ্রম আইনের আরো বেশ কিছু নিয়মও প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। যেহেতু গ্রামীণ টেলিকম শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান, তাই মালিকপক্ষ তাদের ক্ষমতার দাপটে কর্মীদের এসব পাওনা ফাঁকি দিচ্ছেন। কিন্তু আইন সবার জন্য সমান। আর তাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রম কল্যাণ তহবিল থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ টেলিকমকে। চিঠিতে নিট মুনাফার অংশ কর্মীদের না দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
 
নাম না প্রকাশ করার শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের এক কর্মী বলেন, ‘গত ১৯ অক্টোবর শ্রম কল্যাণ তহবিল থেকে মালিকপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে তাদের তেমন কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। আমরা এ অধিকার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেই চাকরিচ্যুতির ভয় দেখান। দেখা যাক, সরকার সবার ক্ষেত্রে আইন সমানভাবে প্রযোজ্য করে কি-না’।
 
শ্রম কল্যাণ তহবিলের মহাপরিচালক ম. আ. কাশেদ মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ দিতে হবে কর্মীদের। কি অনুপাতে কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে তাও উল্লেখ রয়েছে। আইন অনুসারে কোম্পানির নিট মুনাফার ৫ শতাংশের ৮০ শতাংশ সরাসরি পাবেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। আর বাকি ২০ শতাংশের ১০ শতাংশ দিয়ে কোম্পানিতে অভ্যন্তরীণ ফান্ড গঠন ও ১০ শতাংশ সরকারের শ্রম কল্যাণ তহবিলে দিতে হবে। এ পর্যন্ত গ্রামীন টেলিকম একটি টাকাও দেয়নি শ্রম কল্যাণ তহবিলে। তাই আমরা শ্রমিকদের প্রাপ্য নিট মুনাফার অংশ পরিশোধে গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দিয়েছি’।
 
তবে এসব বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
 
গ্রামীণ টেলিকম সূত্রে জানা গেছে, শ্রম আইন অনুসারে গত ১০ বছরে ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা প্রাপ্য হয়েছেন কর্মীরা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৮১৬ টাকা সরাসরি পাবেন গ্রামীণ টেলিকমের ১১০ জন কর্মী। বাকি ১০ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করবে ও সমপরিমাণ অর্থ সরকারের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা ছিল।
 
কোম্পানিটির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট অনুসারে, ২০০৬ সালে ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা,  ২০০৭ সালে ৩৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ২০০৯ সালে ৫২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ২০১০ সালে ২১৮ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ৪৮১ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১২ সালে ৩৩১ কোটি ২৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৩০৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে ৩১৬ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা ও ২০১৫ সালে ৩৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিট মুনাফা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।