ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চুরি যাওয়া অর্থ রিজাল ব্যাংককে ফেরত দিতেই হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
চুরি যাওয়া অর্থ রিজাল ব্যাংককে ফেরত দিতেই হবে

ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

ঢাকা: ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

 

বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গত ২৬ নভেম্বর আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফিলিপাইন যান। বুধবার (৩০ নভেম্বর) দলটি ফিরে আসার পর বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আইনমন্ত্রী বলেন, অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে অঙ্গীকার করেছে। ফিলিপাইনের সিনেটে এ ঘটনায় চলা স্থগিত শুনানি ফের শুরুরও আশ্বাস দিয়েছে দেশটির সরকার।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি দুর্দাতের ব্যস্ততার কারণে বৈঠকটি স্থগিত হয়েছে। এর সঙ্গে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত না দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

চুরি যাওয়া বাকি অর্থ রিজাল ব্যাংক ফেরত দিতে রাজি না হওয়ার বিষয়টি অনৈতিক ও অযৌক্তিক বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
 
আনিসুল হক বলেন, ‘ফিলিপিন্সের মন্ত্রিসভার দুই সদস্য এবং সিনেটের সভাপতির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অত্যন্ত গাঢ়। সে কারণে ওই অর্থ ফেরত দিতে যতো ধরনের সহযোগিতা দেশটির সরকারের করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সরকারকে তারা সব সহযোগিতা করবেন বলে আমাদেরকে কথায়, কাজে ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়েছেন’।

‘এ কথাও পরিষ্কারভাবে তারা বলেছেন, বাংলাদশের হয়ে এ অর্থ আদায়ের জন্য ফিলিপাইন সরকার ও সিনেট লড়ে যাবে’।

তিনি আরো জানান, ‘ওই টাকা আদায়ে ফিলিপাইনের সরকারও আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেশটির সরকার আমাদের হয়েই সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে, এখানে ফিলিপাইনের ক্রেডিবিলিটি ও তাদের ফাইন্যান্সিশিয়াল ইনস্টিটিউশনের ক্রেডিবিলিটি জড়িত। আজকের পৃথিবীতে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রয়োগের বিষয়েও সকল রাষ্ট্র অত্যন্ত সচেতন। সে কারণেই এটির গুরুত্ব বুঝে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা’।

মন্ত্রী বলেন, সিনেটের শুনানির কারণে আরসিবিসি’র দায় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছিল। সে শুনানি শেষ হওয়ার আগেই ফিলিপাইনে নির্বাচন হয়েছিল। শুনানি ফের শুরু করতে সিনেট সভাপতির কাছে প্রস্তাব দিলে তিনি তার অফিসকে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

সিনেট সভাপতিকে উদ্ধৃত করে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছেন, অন্যায়ভাবে কেউ লাভবান হোক, তাদের সরকার তা হতে দেবে না। কারো অর্জিত আয়ের টাকা অন্যায়ভাবে কেউ রেখে দেবে সেটিও ফিলিপাইনের সরকার হতে দেবে না।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানকার একটি শহরে ‘মৌলবাদী সন্ত্রাসী দলের আক্রমণের’ কারণে রাষ্ট্রপতি ওই প্রদেশে চলে গেলে সেটি বাতিল হয়ে যায় বলেও জানান আনিসুল হক।

ফিলিপাইনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানেও আমরা আমাদের দাবি উত্থাপন করি। আমাদের দাবির সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ঘটনায় অনেক নিয়ম ভাঙায় আরসিবিসিকে প্রশাসনিকভাবে দায়ী করেছিল, তাদের ওপরে ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার জরিমানা করেছিল। তার বিরুদ্ধে আরসিবিসি কোনো আপিল না করে জরিমানা মেনে নিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। বাকি ১১ মিলিয়ন ডলারও পরিশোধ করবে’।

আনিসুল হক  বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য ছিল, এ জরিমানা এবং জরিমানা পরিশোধ করার মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে, আরসিবিসি তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। সে কারণে তাদেরকে সম্পূর্ণ টাকা বাংলাদেশকে ফেরত দিতে হবে’।

‘এটিকে ফিলিপাইনের অর্থমন্ত্রীও অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বলেছেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে আরসিবিসিকে এ টাকা পরিশোধে যতো ধরনের আইনি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক চাপ দেওয়ার দরকার, সেটা দিয়ে টাকা আদায় করতে বাংলাদেশের হয়ে তাদের সরকার ও মন্ত্রণালয় লড়বে’।

দেশটির আইন প্রতিমন্ত্রী ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ফিলিপাইনে এ বিষয়ে সরকার ও আরসিবিসি দু’টি মামলা করেছে। একটিতে ৬ জন কর্মকর্তা, আরেকটিতে ২/৩ জন আসামি আছেন’।

তিনি বলেন, ‘আমি সেখানকার আইন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমি দেখা করেছি। আইনমন্ত্রী অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। চিফ প্রসিকিউটর ও মামলাগুলো যারা দেখছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা মামলার ব্যাপারে কথা বলি। আমরা সেখানেও আমাদের যুক্তি তুলে ধরি। আরসিবিসিকে টাকা ফেরত দিতেই হবে’।

কি পরিমাণ অর্থ ফেরত আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা, ৬৬ মিলিয়ন ডলারই আসবে। প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা ফিলিপাইনে আইনি লড়াই অব্যাহত রেখে যাবো। আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। তারা যদি টাকা আদায়ে অন্য কোনো পন্থা করে, সেখানেও আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো’।

আরসিবিসি’র সাম্প্রতিক বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দায় স্বীকারের পর যদি বলে, আমরা  দায় স্বীকার করছি না। তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। তারা কেবল দায় স্বীকারই করে নাই, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার জন্য নির্ধারিত সাজা হিসাবে ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়েও দিয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘আরসিবিসি ভয় পাচ্ছে যে, তাদেরকে টাকাটা দিতে হবে। সেজন্যই অনেক ধরনের গান তারা গাওয়া শুরু করেছে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কে কী দোষ করেছেন, এটির সঙ্গে সেটি সম্পৃক্ত নয়। তার কারণ হচ্ছে, চোরাই মাল এবং সেটি কোথায় গিয়ে ল্যান্ড করেছে, চোরাই মাল- জানা স্বত্ত্বেও তারা কি করেছে?- সেটিই আরসিবিসি’র দোষ’।

‘সে কারণেই আমরা বলছি, আরসিবিসিকে টাকা ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কে দোষী সেটি ভিন্ন বিষয়। ভিন্ন বিষয়ের ব্যবস্থা ভিন্নভাবে করা হবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
আরএম/জেডএস /এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।