ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভালো গ্রহিতাদের প্রণোদনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাগিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৭
ভালো গ্রহিতাদের প্রণোদনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাগিদ

ঢাকা: নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করলেও যেসব গ্রাহককে প্রণোদনা দেয়নি, যেসব ব্যাংক তাদের প্রণোদনা দিতে তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ তাগিদ দেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও এসএম মনিরুজ্জামান এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)।

সভায় চলতি ও নতুন মুদ্রানীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের সার্ভিস চার্জ, হলমার্ক গ্রুপের অনুকূলে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল ও আগের ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

দেশের উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলা ও ভালো ঋণগ্রহীতাদের নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৫ সালে আদায় করা সুদের উপর ১০ শতাংশ রিবেট (রিবেট) দেওয়ার বিধান জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু মাত্র ছয়টি ব্যাংক ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা রিবেট দিয়েছে এবং ১৬টি ব্যাংক রিবেট দেওয়ার জন্য ৫৭ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। বাকি ৩৪টি ব্যাংক এখনও রিবেট দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা (রিবেট) দিতে ব্যাংকার্স সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণের সার্ভিস চার্জ কমাতে ছয়টি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহিতাদের সুদ হারে প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত ছিল তা মাত্র কয়েকটি ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে। বাকিগুলোকে এ জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, হুন্ডি বেড়ে যাওয়া রেমিটেন্স কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে ও হুন্ডি প্রতিরোধে ব্যাংকগুলোকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে নগদ ডলারের সংকট মেটাতে ডলার আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের ঋণের প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ধরনের চার্জ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। লোন অ্যাপ্লিকেশন ফি, লোন প্রসেসিং ফি, ডকুমেন্টেশন ফি, সার্ভিস চার্জ, লিগ্যাল ফি, অ্যাপ্রাইসাল ফি, সার্ভে ফি, মটগেজ ফি, আর্লি সেটেলমেন্ট ফি, ব্যাংক গ্যারান্টি, মনিটরিং ফি, রিনিউয়াল ফি ইত্যাদি নামে চার্জ আদায় করে।

এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি চার্জের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে কোনো কোনো ব্যাংক। এতে ঋণের কার্যকর সুদ হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। তাই সার্ভিস চার্জ আদায়ের ছয়টি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান স্প্রেড যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বর্তমানে বাজারে সুদের হার ক্রমশ কমছে। কিন্তু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ায় আমানতের বিপরীতে যে পরিমাণে সুদের হার কমেছে, ঋণের বিপরীতে সেই হারে কমেনি। এতে আমানতকারী ও ঋণগ্রহিতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক ঠকানো এ কৌশল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলো সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে ও গ্রাহকের অনুকূলে সৃষ্ট ফোর্সড লোনের বিপরীতে সুদ আদায় করবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া যেসব ব্যাংক পাওনা আদায়ে মামলা করেছিল ওই সব মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
 
হুন্ডির কারণে দেশের রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও বাজারে নগদ ডলারে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নগদ ডলারের সংকট মেটাতে ডলার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হুন্ডি বন্ধে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এসই/জিপি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।