ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘রাজস্ব নেটওয়ার্কে’ চর কুকরি-মুকরি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৭
‘রাজস্ব নেটওয়ার্কে’ চর কুকরি-মুকরি চর কুকরি-মুকরিতে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অন্যরা

ভোলার চর কুকরি-মুকরি থেকে: বিদ্যুৎ নেই। নেই ভালো যোগাযোগ অবকাঠামো, কলকারখানা। এ যুগেও মোবাইল নেটওয়ার্ক করে ওঠানামা। তবুও সম্প্রসারিত হচ্ছে রাজস্ব নেটওয়ার্ক!
 
 

মাত্র ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। জোয়ার ভাটায় চলে যোগাযোগ।

অবকাঠামো উন্নয়নে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মানুষও উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব দিয়ে বাহাদুরি দেখাতে চান!
 
চর কুকরি-মুকরি ভোলার দক্ষিণে মেঘনা মোহনায় বঙ্গোপসাগরের চমৎকার একটি দ্বীপ। ভোলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চর কুকরি-মুকরি যে বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে হলেও মডেল।  
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নসহ সারাদেশের ৫০১টি ইউনিয়নের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
 
বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) হিসেবে পরিচিত। ভিডিও কনফারেন্সের সময় চর কুকরি-মুকরিতে ইউএনডিপির প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক উপস্থিত ছিলেন।
 
ইউএনডিপির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক এর উপস্থিতি আর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কারণে অবহেলিত জনপদ চর কুকরি-মুকরি ইউডিসিকে দেশের ‘ইউডিসির মাদার প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার দেখছেন এনবিআর চেয়ারম্যান
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ‘রাজস্ব নেটওয়ার্ক’ সম্প্রসারণে বিভাগ, জেলা, উপজেলার পর ইউনিয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যন্ত করসেবা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
ইউনিয়নেও রাজস্ব প্রদানে সক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রুপকল্প বাস্তবায়ন ও চর কুকরি-মুকরির মতো সারাদেশে অবহেলিত জনপদের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর রাজস্ব প্রয়োজন।
 
রাজস্ব নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি, করসেবা সহজ করা ও সরকারের উন্নয়ন সহযাত্রী হিসেবে ইউডিসি ব্যবহার করতে চায় এনবিআর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি শ্রেণির ই-টিআইএন প্রদান করার কাজ শুরু হয়েছে।
 
চর কুকরি-মুকরির ইউডিসি দেশের মধ্যে ‘ইউডিসির মাদার প্রতিষ্ঠান’ হওয়ায় একে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চর কুকরি-মুকরি ইউডিসির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে করসেবা।
 
ইউডিসির ২ জন উদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে ‘ই-টিআইএন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এ দুই উদ্যোক্তা ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে ১৪ জনের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
 
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ছুটে যান সেই মাদার ইউডিসি পরিদর্শনে। এতো প্রতিকূলতার মাঝেও করসেবা প্রদান করা ও মানুষের আগ্রহ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
 
তিনি বলেন, আমাদের ওপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে, জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে করনেট সম্প্রসারণের। এজন্য এনবিআর স্থানীয় পর্যায়ে যাওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে।
 
চেয়ারম্যান আরো বলেন, এক সময় রাজস্বের জন্য রাজধানী, বিভাগের ওপর নির্ভর করতাম। এখন আমরা জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নে চলে আসছি। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সঙ্গে পার্টনারশিপ হয়েছে। ইউডিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পার্টনারশিপ স্থাপনের অংশ হিসেবে ইউডিসি’র আদি প্রতিষ্ঠান চর কুকরি-মুকরির ইউডিসি পরিদর্শন ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য এখানে আসা।
 
সারাদেশের কর কমিশনারদের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, নিজ নিজ কর্ম এলাকায় যতো ইউডিসি আছে সেখানে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আয়কর দিতে সক্ষম ব্যক্তিদের ই-টিআইএন গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করা।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর ভর করে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে। পদ্মাসেতু হবে দক্ষিণাঞ্চলের স্বর্ণদ্বার। পায়রা বন্দর হবে রাজস্বসহ সব সম্ভাবনার দ্বার।
 
এ অঞ্চলে একদিকে রাজস্ব আহরিত হবে, অন্যদিকে উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। চর কুকরি-মুকরিসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর প্রদানে বেশ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
 
প্রথমবারের মতো ই-টিআইএন নেওয়া চর কুকরি-মুকরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল বাছেদ বাংলানিউজকে বলেন, নিজেদের উন্নয়নের জন্য কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে ই-টিআইএন নিয়েছি।
 
সহকারী শিক্ষক মোস্তফা মো. কামাল বলেন, করের টাকা কিভাবে উন্নয়নে ব্যয় হয় সেটা জানি। আমরা অনেক অবহেলিত। আমরা কর প্রদান করে সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়, চাই উন্নয়ন।
 
চর কুকরি-মুকরি ইউডিসির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সুমন হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত ১৪ জন ই-টিআইএন গ্রহণ করেছেন। ই-টিআইএন সহ সব ধরনের করসেবা দেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
আরইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।