ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শত কষ্টেও পেশা ছাড়বে না চুনিয়ারা

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
 শত কষ্টেও পেশা ছাড়বে না চুনিয়ারা চুল্লিতে দেওয়ার জন্য শামুক-ঝিনুকের খোলস টানছেন বিনি রাণী। ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন

দিনাজপুর :  অতিথি আপ্যায়নে পান খাওয়ানোর রীতি বাংলাদেশের অনেক পুরনো সংস্কৃতি। এই পানকে সুস্বাদু করে তোলে চুন। কথায় আছে, পান খেতে চুন লাগে। আর এই চুনের মধ্যে শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুনের কদর সবচেয়ে বেশী।

কিন্তু জলাশয় কমে যাওয়ায় শামুক-ঝিনুকের ‍উৎপাদন কমে গেছে উত্তরাঞ্চলে। তাই বেড়ে গেছে খোলসেরও দাম।

কেজি-মণের হিসেবে এ দাম এখন দক্ষিণ বঙ্গের চিংড়ি ঘের এলাকায় পাওয়া খোলসের প্রায় দ্বিগুণ। তাই টানা পরিশ্রমে শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি করা চুন বেচে লাভের মুখ দেখা বেশ দুরূহ হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের চুনিয়াদের।  

দিনাজপুরে শামুক-ঝিনুকের চুন যে পাড়ায় তৈরি হয় সেখানকার নামই চুনিয়াপাড়া। জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিলার পূর্বে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণে এই চুনিয়াপাড়ার অবস্থান। চুল্লিতে শামুক-ঝিনুকের খোলস ঢালছেন বিনি রাণী।  ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন

সরেজমিনে দেখা গেলো, কিনে নেওয়া শামুক-ঝিনুকের খোসা বাছাইয়ে ব্যস্ত বিনি রাণী। বাছাইয়ের পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলেন শামুকগুলো। সেগুলো রোদে শুকিয়ে মাটির তৈরি বড় চুলার উপর রক্ষিত খড়ির (জ্বালানি) উপর রাখলেন। চুলায় দেওয়া খড়িতে আগুন দিয়ে শামুকগুলো পোড়ালেন।

পোড়া শামুক-ঝিনুক চালনি দিয়ে চেলে, বেছে, পানি মিশিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে তৈরি করলেন চুন। সেই চুন পাত্রে ভর্তি করে স্বামী গনেশ রায় জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। চুন তৈরিতে ব্যস্ত বিনি রাণী।  ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন

চুন তৈরির কারিগর বিনি রাণী বাংলানিউজকে বলেন, জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদ-নদী থেকে এক শ্রেণীর মানুষ শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে আমরা চুন তৈরির শামুক কিনে থাকি। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ শামুকের মূল্য সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পড়ে।   এখন খড়ির দামও বেড়েছে। আবার সঙ্গে রয়েছে আমাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। কিন্তু সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি চুনের দাম।   তবু শত কষ্ট হলেও পূর্ব পুরুষের পেশা তো আর ছাড়তে  পারি না।

একই এলাকার মানিক রায় নামের অপর এক চুনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শামুক-খড়িসহ চুন তৈরির সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কষ্ট সইতে না পেড়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে। আর যারা এ পেশায় এখনও জড়িত রয়েছে তারা পূর্ব পুরুষের সম্মান রক্ষার্থেই হাজারো অভাব-অনটনের মধ্যেও এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছে। এক সময় এই গ্রামের সব পরিবার (৪০ টি) শামুকের তৈরি চুন তৈরির পেশায় জড়িত ছিল। যা কমতে কমতে বর্তমানে ১৫ পরিবারে নেমে এসেছে।

চুনের দাম কম হওয়া, ঝিনুকের দাম বৃদ্ধি আর বাকীর দৌর‍াত্ম্যে ভালো নেই চুনিয়ারা। ফলে স্বল্প পুঁজিতে হুমকির মুখে পড়েছে চুনিয়াদের পূর্ব পুরুষের পেশাটি। তবুও বুকভরা আশা চুনিয়াদের। গ্রাম-বাংলার এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা চায় চুনিয়ারা।

দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাম-বাংলার এই শিল্পটিকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ অতি প্রয়োজন। তাই চুন তৈরির পেশায় জড়িত সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ ঋণ দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময় : ১২৩২ ঘণ্টা,, এপ্রিল ১৬, ২০১৭  
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।