ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিলেট-চট্টগ্রামের চাইতে স্বাদের চা তেঁতুলিয়ায় (ভিডিও)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
সিলেট-চট্টগ্রামের চাইতে স্বাদের চা তেঁতুলিয়ায় (ভিডিও) বাড়ির উঠোনে চা বাগ‍ান। ছবি: নয়ন

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) থেকে: ভারতের দার্জিলিং পাহাড় শ্রেণীর পাদদেশ দক্ষিণে এগিয়ে রূপ নিয়েছে সমতল ভূমিতে।বাংলাদেশ সীমান্তে এই সমতল ভূখণ্ডের নাম তেতুলিয়া। এই তেঁতুলিয়াই দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা। গত দেড় বছর ধরে এ সমতল ভূমিতে চা চাষ বেড়েছে ব্যাপক হারে। গ্রামে গ্রামে বাড়ির আঙিনাতেই গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চা বাগান।  আর সমতলে চা বাগান থাকা একমাত্র জেলার তকমা পেয়েছে পঞ্চগড়।

তেঁতুলিয়া উপজেলার শহরে বা গ্রামে কোন গৃহস্থের আঙিনায় ঢুকতে গেলেই হাতের ডানে বামে চোখে পড়বে কয়েক বিঘা বা কয়েক একর জমিতে চায়ের বাগান। সিলেট বা অন্য অঞ্চলগুলোতে চা গাছ উচ্চতায় ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হলেও এখানে দেড় থেকে দু’ফুটের বেশি নয়।

এখানে ধান বা ভুট্টা ক্ষেতের পাশের জমিতেই হয় চা চাষ।

মহানন্দা নদীর তীর ধরেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু চায়ের বাগান। উপজেলার সাহেবজাদা এলাকায় সাড়ে ৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে চা বাগান। মালিক মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ির সামনেই এ বাগান। এখানে কাজ করেন ২৬ বছর বয়সী আল আমিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তেতুলিয়ার চা সিলেট বা চট্টগ্রামের চায়ের চেয়ে সুস্বাদু। তবে এখানে যত্ন বেশি করতে হয়।

নিজের জমির বাগানের কথা উল্লেখ করে আল আমিন বলেন, নদীর কাছে হওয়াতে এখানে মাটি শুকিয়ে যায় বেশি। ফলে সেচের পানি দিতে হয় তখন। এটা মাসে একবার, আবার কয়েক মাসে একবার দিলেও চলে।

চা বাগানের জন্য সাধারণত টিলা ধরনের জমি বাছাই করা হয়। যেনো গাছের গোড়ায় পানি না জমে। তাহলে এ সমতলে চাষ হচ্ছে কিভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, আমার এ জমিতে ৬টি ড্রেন কাটা আছে। যেনো গাছের গোড়ায় পানি ব্লক হয়ে যেতে না পারে। পানি ব্লক হলে গাছ বাঁচানো যায় না। সমতলে চা বাগান

এখানে গাছের প্রধান দুই শত্রু হিসেবে লাল পোকা এবং মশার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, লাল পোকার জন্য ওমাইট, সোমাই এবং ড্রেজার এক্সট্রা কীটনাশক ব্যবহার করি এবং মশার জন্য লিস্টার ও কাপ কীটনাশক ব্যবহার করি। এই পুরুষ মশারা পাতা খেয়ে ফেলে।

আব্বাস আলীর বাড়ির আঙিনায় রয়েছে তিন একর চা বাগান। তিনি জানান, প্রতি কেজি পাতা ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। জুন-জুলাই মাসে দামটা আরেকটু বাড়ে।

গাছ থেকে হ্যান্ড প্লাকিং (হাত দিয়ে পাতা ছেড়া) করা হলে ১৫ দিনে একবার পাতা ছেঁড়া হয়। আর মেশিনে কাটা হলে (কাস্তে বা কাঁচি দিয়ে) ৪৫ দিনে একবার ছেঁড়া হয়। তার তিন একর জমিতে ১৬ হাজার গাছ রয়েছে। চারাগুলো সাইজ অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ টাকা দামে কেনা হয়। সমতলে চা বাগান

সমতলে চা চাষকে ক্ষুদ্রায়তন বলে উল্লেখ করেছেন পঞ্চগড় চা বোর্ডের সিনিয়র খামার ব্যবস্থাপক জাহিদ ইমাম। ফোনে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ এলাকায় ক্ষুদ্র আকারে চা চাষ করা হয়। এখানে অভাব ও দারিদ্র দূর করতে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে চা চাষের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৯৬ সালে মাটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এখানে চা চাষের উপযুক্ত জমি রয়েছে। পরে ২০০১ সালে প্রথম চা চাষ করা হয়। ২০১৫ সালের দিকে চা চাষ ব্যপক জনপ্রিয়তা পায়।

দেশে একমাত্র পঞ্চগড় জেলাতেই সমতল ভূমিতে চা চাষ করা হয়। ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী জেলায় ১৮৪৫ হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়। যার বেশিরভাগই তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এখানে ১৮২ জন নিবন্ধিত এবং ১২০৫ জন অনিবন্ধিত চাষী রয়েছেন। ১টি সেট গার্ডেন ছাড়াও ফ্যাক্টরি রয়েছে ৬টি। এসব ফ্যাক্টরি চা পাতা কিনে থাকে। পাতার মান অনুযায়ী দাম নির্ভর করে। মেশিনে কাটা পাতার দাম কম হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।