ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘একটি বাড়ি একটি খামার’র ঋণের অর্থ স্থানান্তরে আপত্তি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
‘একটি বাড়ি একটি খামার’র ঋণের অর্থ স্থানান্তরে আপত্তি!

ঢাকা: ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের প্রতিটি সমিতিতে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কর্মী সৃজনের প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের বাড়িতে খামার তৈরি না করায় বরাদ্দকৃত ঋণের অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময়ে এসে অনুদান হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

প্রদর্শনী খামার তৈরির মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সদস্যদের দক্ষতা ও প্রযুক্তি বিনিময় কার্যক্রমের জন্য সরকারের ‘ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল’ নামে ৩ হাজার ৩১ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়।

বরাদ্দকৃত ঋণের অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময়ে এসে অনুদান তহবিল হিসেবে চিহ্নিত করার এই উদ্যোগকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদেরই একজন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ড. মিহির কান্তি মজুমদার।

এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী দাবি করে প্রকল্প পরিচালককে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে  পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ড. মিহির কান্তি মজুমদার।  

তিনি বলেছেন, অনুদান তহবিলে স্থানান্তর করলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৮ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ ও বর্তমানে বিতরণ করা ঋণ আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সমন্বিত গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ১ হাজার ১শ ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

তবে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়।  

২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামারপ্রকল্প’কে স্থায়ী রূপদান করে বিশেষায়িত ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক–এই দুটি প্রকল্পই চালু আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমিতির সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পোস্ট ট্রেইনিং সার্পোট ফান্ড নামে ১ হাজার ২শ ৭৩ কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল গঠন করা হয়। গতবছর প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এই তহবিলে অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।

পল্লী উন্নয়ন বিভাগের দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পে এই অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কর্মসূচি চালু রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঘূর্ণায়মান এই ঋণের কিস্তি আদায়ও সন্তোষজনক। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ঋণের তহবিল হিসেবে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায়ের কথাও উল্লেখ আছে।

প্রকল্পের প্রতিটি সমিতিতে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে ৫ জন বিষয়ভিত্তিক কর্মী সৃজনের প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং প্রশিক্ষিত ২ লাখ ২ হাজার ৬৩৫ জন কর্মীর বাড়িতে খামার তৈরি না করায় প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প পরিচালক আকবর হোসেন এ তহবিলকে অনুদান হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু করেন।

এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসেন বলেন, অফিস চলাকালে তার কাছে এলেই কেবল তিনি এবিষয়ে কথা বলতে পারবেন।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার পল্লী উন্নয়ন সমবায় সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে ২০১৬ সালের আগে গঠিত ৪০ হাজার সমিতির প্রায় ২২ লাখ সদস্যদের সঞ্চয় ও তহবিল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি কার্যক্রমের সময় প্রায় ৫ মাস সমিতির কার্যক্রমে অচলাবস্থার কারণে খেলাপী ঋণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ অবস্থায় ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিলকে অনুদান হিসেবে ঘোষণা করা হলে ঋণ আদায় দারুণভাবে  বিঘ্নিত হবে।  

এবিষয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।