ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যিক সুযোগ কাজে লাগাতে দরকার রাজনৈতিক ঐক্যমত  

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
বাণিজ্যিক সুযোগ কাজে লাগাতে দরকার রাজনৈতিক ঐক্যমত   ‘বিআইআইএসএস’ মিলনায়তনে এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী- ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: বাংলাদেশের সামনে যে বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, তা কাজে লাগাতে রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং ভারত ও চীনের সঙ্গে ব্যালান্স সম্পর্ক গড়ে তুলতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

একই সঙ্গে আন্তরাষ্ট্রীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিজ দেশের শিল্পের সুরক্ষা দেওয়ার নীতি গ্রহন, আন্তঃদেশীয় চুক্তিতে দেশের স্বার্থ সবার আগে পুনর্বিবেচনা, দুর্নীতিরোধ ও পারস্পরিক স্বার্থে দরকাষাকষির দক্ষতা বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন তারা।

শনিবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর ইস্কাটনে ‘বিআইআইএসএস’ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ইন রিজিওনাল ট্রেড অ্যান্ড কানেক্টিভিটি: এ পলিটিকো-ইকোনোমিক অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ তাগিদ দেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কোনো রাজনৈতিক ঐক্যমত নেই। যা ভারতসহ সব দেশে আছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তারা ভারতের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। আবার যখন বিরোধী দলে গিয়েছে তখন উগ্র ভারত বিরোধীতা করেছে। এটা তো হওয়ার কথা না। সম্পর্ক হবে সরকার টু সরকার বা দল টু দল না। সম্পর্ক হওয়া উচিত রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র। তবে হ্যাঁ একটি বিশেষ দলের সঙ্গে আর একটি বিশেষ দলের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র তো সে সম্পর্ক হওয়া উচিত যার যার দেশের নিজ স্বার্থকে মাথায় রেখে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ভারসাম্যের কথা উঠলেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার কথা ওঠে। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার পরিমান অনেক বেশি হলেও তা সামান্যই সামনে আনা হয়। কিন্তু কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ভারসাম্য নিয়ে কখনোই কোনো কথা ওঠেনা।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশি অস্ত্র ও অ্যালকোহল ছাড়া সব পণ্যেই শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। তবু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কখনোই ভারতে রফতানি করতে আগ্রহী নন। ভারতের বিশাল একটি বাজার আছে। তবু আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা সেটা নিয়ে আগ্রহী নন। তারা আমেরিকা, ইউরোপ বা কানাডেই বেশি আগ্রহী।  
তোফায়েল বলেন, বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার জন্য ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তারা কেনো ভারত বা চীন থেকে এতো পণ্য আমদানি করেন! অন্যদেশ থেকে কেনো করেন না, তা তারাই ভালো জানেন। আমরা জানি ভারত ও পাকিস্তানের কারনে ‘সার্ক’ কার্যকর হয়নি। এটা হলে সাফটা কার্যকর হতো। তখন বাণিজ্যিক ভারসাম্য ফিরে আসতো। তাই এসব বিষয়ে আমাদের লিবারেল হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যমতে পৌছাতে হবে। তবেই কেবল বাংলাদেশ তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের সুফল ঘরে তুলতে পারবে। তা না হলে ভারসাম্যহীন সম্পর্ক দেশকে চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

জেএসডি প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব বলেন, আমদের একটি গভীর সমুদ্র বন্দর দরকার। সরকার এদিকে নিশ্চয়ই নজর দেবে। আর একটি বিষয় দরকার তা হলো রাজনৈতিক মতঐক্য। এই মতঐক্য থাকলে সরকারের দরকষাকষির শক্তি বাড়ে। এটা না হলে আমরা কিছুই পাবোনা।

অর্থনীতিবিদ মামুনুর রশীদ বলেন, বৈশ্বিক ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির জন্য অবশ্যই কানেক্টিভিটি দরকার। কিন্তু তা হতে হবে আমদের স্বার্থে। তবে এজন্য যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা অতীতেও দেখিনি, এখনো দেখছিনা। তবে এটা সত্য চীন ও ভারতের একই পাল্লার চাপ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভালোভাবেই সামলাচ্ছে। কিন্তু এই সামলানোর ক্ষমতাটা বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে ‘ক্রাচ’ পড়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বৈশ্বিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যর সম্ভাবনা।

সাবেক সচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, কানেক্টিভিটি নিয়ে ভাবার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা কি পারি। ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট নিয়েও ভাবতে হবে। স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। ভারতের বাজারে আমাদের পণ্যের প্রচারণার সুযোগ করতে হবে। এজন্য আমাদের কি কি দরকার সে বিষয়ে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কানেক্টিভিটি একটি পলিটিক্যাল মাইন্ড সেটআপের বিষয়। তবে এটা সহজের জন্য ‘ইজ টু ডুয়িং বিজনেস’ ইজি করতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ ইব্রাহীমসহ অনেকে।  

জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস প্রেসিডেন্ট ড. এম আতাউর রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগষ্ট ১৯, ২০১৭
আরএম/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।