ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ পণ্য ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পেলেও সড়কপথে ট্রাকের মাধ্যমে এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার সার্ভিস চালু না হওয়ায় রপ্তানি তেমনভাবে বাড়ছে না।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিমানবন্দরের কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভ‍ারতে পণ্য আনা নেওয়া করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পরিবহন ও সরবরাহ খরচ বৃদ্ধি পায়।

এ পরিবহন পদ্ধতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর স্থলপথে কুরিয়ার সার্ভিস সেবা চালু করা গেলে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যাবে।

ভারতবাসীর কাছে বাংলাদেশি পণ্য স্বল্প খরচে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়কপথে ট্রাকের মাধ্যমে এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার সার্ভিস চালুর বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ভারত সফরে যাচ্ছে।

সেখানে তারা দুই দেশের যৌথ টাস্কফোর্স কলকাতায় মিলিত হবেন এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক পথে ট্রাকের মাধ্যমে এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে।

এবিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও বিজনেস ইনিসিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট’র (বিইউআইএলডি) ট্রাস্টের বোর্ডের উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহিম বলেন, সড়ক পথে ট্রাকের মাধ্যমে এক্সপ্রেস শিপমেন্ট কুরিয়ার সার্ভিস চালুর বিষয়ে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূরীকরণ বিষয়ে চলতি বছরের ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর র্কাযালয়ে ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা হয়। সেখানে ডুয়াল ট্রায়াল রান নিয়মিত করতে বাধাসমূহ দুর করা, অন্যান্য সুবিধা চালু করা এবং রানের ট্রায়ালের জন্য ট্রাক ও ট্রেনের (ঢাকা-দর্শনা মৈত্রী) ব্যবহারে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটে ৫০০ যানবাহন চলাচল করে। আরও ২০০ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দরের মাধ্যমে প্রতিদিন ২৫০০ কুরিয়ার কনসাইনমেন্ট খালাস হচ্ছে।

২০০৮ সাল থেকে ঢাকা ও কলকাতায় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন সপ্তাহে আটটি রাউন্ড ট্রিপে যাতায়াত করে। এই রুটে যাতায়াতে এতোদিন ১৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় হলেও বর্তমানে মাত্র ৮ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে পৌঁছে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে বেনাপোল-পেট্রাপল রুটের মাধ্যমে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ৭১৫ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছিল।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ৬০০ যাত্রীর যাতায়াতের ব্যবস্থার পাশাপাশি ৭৫টি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ টন পণ্য পরিবহন করা যায়। প্রয়োজনীয় সুবিধার বিকাশ হলে কুরিয়ার সামগ্রী বহন করার জন্য রেলওয়ে একটি ভাল মাধ্যম হবে।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পকের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করা ৬৮৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং আমদানি পণ্যগুলি ৫ দশমিক ৪৫২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে রপ্তানি করেছে। শুল্কমুক্ত এবং উন্মুক্ত কোটায় বাজার সুবিধা দেওয়ার পরও ভারতে পণ্য রপ্তানি বিভিন্ন পরিবহন সংশ্লিষ্ট বাধার কারণে  ক্রমবর্ধমান রূপ নিচ্ছে না।

বাংলাদেশের প্রধানত রপ্তানি পণ্য হচ্ছে বোনা কাপড়, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য এবং সাইকেল। অন্যদিকে বাংলাদেশ তুলা, তুলার সুতা, তুলার কাপড়,যানবাহন, পারমাণবিক চুল্লী, বয়লার, যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি, সিরিয়াল, ভোজ্য সবজি, লোহা ও ইস্পাত আমদানি করে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১৫ সালের নভেম্বরে কলকাতা-আগরতলা-ঢাকা রুটে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা-দিল্লি রুটে দুটি ট্রায়াল রান পরিচালিত হয়। ২০১৭ সালের আগস্টেই একটি ট্রায়াল রান পরিচালনা করা যেতে পারে বলে জানানো হয়। এতে সহায়তা করবে আর্ন্তজাতিক কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান দ্য ডিএইচএল গ্লোবাল এবং বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)।  

বিজনেস ইনিসিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিইউআইএলডি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন,বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার উন্নতির উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক ভারতীয় উদ্যোক্তা তাদের নিজস্ব বাজারে ই-কমার্স দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্যগুলি পেতে আগ্রহী এবং পাশাপাশি তৃতীয় দেশগুলিকেও সরবরাহ করতে আগ্রহী।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয়রা বাংলাদেশের সিল্ক, সারের প্রতি আগ্রহী যা একটি নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো যেতে পারে। পণ্যগুলির বহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে যাবে যদি তারা আকাশযোগে না পাঠিয়ে সড়কপথে পাঠানো যায়।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসএমই প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানোর জন্য সড়কপথে একটি কুরিয়ার সার্ভিস চালু করা, ই-কমার্স সুবিধার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।