ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফান্ড ট্রান্সফারের নীতিমালা নেই অর্ধেকের বেশি ব্যাংকে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
ফান্ড ট্রান্সফারের নীতিমালা নেই অর্ধেকের বেশি ব্যাংকে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশের ৫৮ শতাংশ ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় ফান্ড ট্রান্সফারের আদৌ কোনো নীতিমালা আজ পর্যন্ত হয়নি। ৯৬ শতাংশ ব্যাংক সেকেলে পদ্ধতিতে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের হিসাব করছে।

‘ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং অব কমার্শিয়াল ব্যাংকস:স্টাটাস অ্যান্ড মেজারস ফর ইমপ্লিমেন্টিং ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার(২৬ আগস্ট)রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে এক সেমিনারে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

এই গবেষণাটি করেছেন বিআইবিএম’র একদল গবেষক।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো: আলমগীর। সেমিনারে ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালট্যান্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

‘ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং অব কমার্শিয়াল ব্যাংকস:স্টাটাস অ্যান্ড মেজারস ফর ইমপ্লিমেন্টিং ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬২ শতাংশ ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয় ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি। আবার ৮৫ শতাংশ ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয়। ৪ শতাংশ ব্যাংক অন লাইন ক্যালকুলেটারের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার কার্ভ ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করছে।

এদিকে ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল রিপোটিং ইনিসিয়েটিভস(জিআরআই)গাইড লাইন অনুসরণ করে রিপোর্টিং করে মাত্র ৭টি ব্যাংক। ৩৪টি ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে না। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলো আংশিক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে।

যদিও ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে স্বাধীনভাবে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট(আইএসআর) প্রকাশ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ সময়ের মধ্যে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করে প্রতিবেদন করছে মাত্র ৭টি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ৭.১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যা এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ দুটোই একই সঙ্গে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিংয়ের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করা। এ লক্ষ্য পূরণে টেকসই অর্থায়নের বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং করছে। তিনি বলেন, ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট রেট নির্ধারণ করতে হবে।

প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, যেসব ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করবে তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এতে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বাড়বে।  

তিনি বলেন,বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, মোট ঋণের দশমিক ৫ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০টি আইটেমে টেকসই অর্থায়ন করার কথা থাকলেও ১২টিতে অর্থায়ন করেছে ব্যাংক। এ চিত্র খুবই হতাশাজনক। আসলে ব্যাংকগুলো টেকসই অর্থায়ন করছে না বলে প্রতিবেদনও করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে সময়মতো রিপোর্টিং করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করে এজিএমে প্রতিবেদন উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এজন্য আগে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

 বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সাসটেইনেবল রিপোর্টিং এবং ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং নীতিমালা করার বিষয়ে কিভাবে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করবে এনিয়ে ভেবে দেখা হচ্ছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি)কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা।  

বাংলাদেশ সময়:২০০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৮
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।