ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হয়রানির ভয়ে লাইসেন্সে ‘অনাগ্রহী’ চাল ব্যবসায়ীরা 

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
হয়রানির ভয়ে লাইসেন্সে ‘অনাগ্রহী’ চাল ব্যবসায়ীরা  ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চাল মোকামগুলোর একটি বগুড়া। এ জেলায় লাইসেন্সধারী মিল মালিক রয়েছেন এক হাজার ৯৪৮ জন। এর বাইরেও ছোট ও মাঝারি মানের কয়েক হাজার চাতাল ব্যবসায়ী আছেন। 

এ হিসেবে জেলার ১২ টি উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩ হাজারের বেশি খুচরা ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রয়েছেন। রয়েছেন শতাধিক আমদানিকারকও।

 
 
চালের বাজার বেসামাল হয়ে পড়ায় সম্প্রতি সরকার এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের লাইসেন্সের আওতায় আনার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নামেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও লাইসেন্স করার বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই এ জেলার চাল ব্যবসায়ীদের।
 
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ছিল নতুন করে লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের শেষ দিন। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে ২৭৩ জন খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারি ৫২ জন ও মাত্র ৭ জন আমদানিকারক লাইসেন্স সম্পন্ন করেছেন।  

 
লাইসেন্স গ্রহণে অনীহার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ফি কম হলেও প্রত্যেক বছর ট্রেড লাইসেন্স বাবদ অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়। ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে করতে হয় মার্কেটিং লাইসেন্স। দিতে হয় আয়কর। দোকান ভাড়া ছাড়াও আনুষাঙ্গিক ব্যয় তো রয়েই গেছে।  

এর মধ্যে আবার চাল বিক্রির লাইসেন্স করতে হবে। যদিও লাইসেন্স ফি কম কিন্তু নিতে গেলে খাজনার চেয়ে যেন বাজনাই বেশি পড়ে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।  
 
তাদের অভিযোগ, ব্যবসা সংক্রান্ত এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। গুণতে হয় বাড়তি টাকা। বাড়তি টাকা না দিলে এ কাগজ নেই ও কাগজ নেই বলে-বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।  

পায়ে ব্যথা ধরে গেলেও কাগজপত্রের ভুলভ্রান্তি যেন শেষ হতেই চায় না! তবে বাড়তি টাকা পকেটে পুরলেই কোনো ভুল থাকে না-সেসব কাগজে! লাইসেন্স পেতেও সময় লাগে না।
 
ব্যবসায়ীরা জানান, লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি কম। এরপরও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এছাড়া মজুদ নিয়েও টানাটানি শুরু হবে। ১৫ দিন পরপর স্টক দেখাতে হবে। হয়রানি থেকে বাঁচতে এ খাতেও বাড়তি টাকা খরচের আশঙ্কা রয়েছে।  

এসব শঙ্কা আর হয়রানির ভয়ে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স করতে খাদ্য বিভাগে যাচ্ছেন না বলে জানান একাধিক খুচরা ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী।  

জেলা খুচরা ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, সদর উপজেলায় কমপক্ষে ছয় শতাধিক খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন। হয়রানির কারণে সিংহভাগ ব্যবসায়ী এখনও লাইসেন্স করেননি।

ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স গ্রহণের একই অবস্থা বগুড়ার অন্যান্য উপজেলার আড়ৎগুলোতেও।  

শেরপুর উপজেলা আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন জানান, এ ‍উপজেলায় সমিতির আওতায় মোট ৭৭ আড়তদার রয়েছেন। এরমধ্যে লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মাত্র ১৫-২০ ব্যবসায়ীর।

তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যেসব চাল ব্যবসায়ী লাইসেন্স করেছেন তাদের নির্ধারিত ফি ছাড়া বাড়তি একটি পয়সাও গুণতে হয়নি।
 
‘আসলে নির্দিষ্ট সময় পরপর সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে চালের স্টক জানাতে হবে। এতে কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত চাল মজুদ করলে ধরা পড়বেন। এ ভয়ে লাইসেন্স করতে আগ্রহী নন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। ’
 
মাইন উদ্দিন বলেন, বলেন, লাইসেন্স করার নির্ধারিত সময় শেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সময় বাড়ালে ব্যবসায়ীরা আবারও লাইসেন্স করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু সময় না বাড়লে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

শিগগির জেলায় ধারাবাহিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হবে জানিযে তিনি বলেন, চালের ব্যবসা করতে হলে আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সের আওতায় আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এমবিএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।