বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান এসব কথা বলেন। রোববার (০৭ জানুয়ারি) বিকেলে বন্দর ভবনে বাংলানিউজের কাছে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে এক সময়ের মৃত প্রায় এ বন্দর। সরকারের আন্তরিকতায় মোংলা বন্দরের সকল কার্যক্রমের গতিশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এসেছে গতি। বন্দর ব্যবহারকারীরা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে বন্দরকে। যারা বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে এ বন্দরের ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সেই চাপ সামাল দিতে এখন থেকেই প্রস্তুত হচ্ছে বন্দর। ড্রেজিং এর মাধ্যমে চ্যানেলের নাব্যতা বাড়িয়ে ১০ মিটার গভীর জাহাজ আসার ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনীয় টার্মিনাল বাড়ানো, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা, ইয়ার্ডের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। সর্বোপরি একটি আধুনিক বন্দরের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করা হচ্ছে।
ফারুক হাসান আরও বলেন, বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তাসহ সবার নজর মোংলা বন্দরের দিকে। মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান সরকার চাচ্ছে মোংলা বন্দর যাতে আরও কার্যক্ষম হয়। চট্টগ্রামের যানজট কমানোর জন্য মোংলা বন্দরকে বিকল্প হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে আরও বেশি বেড়ে যাবে সবার দৃষ্টি। গত অর্থবছরে বিদেশি জাহাজ আগমন ও রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এ বন্দরে।
কী কী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, মোংলা বন্দরকে ঘিরে সরকার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে আর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চার লেন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন, দিগরাজ থেকে পুরনো মোংলার জয়মনিরঘোল ফুড সাইলো পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, স্পেশাল ইকোনমি জোন স্থাপন, স্বল্প সময়ের মধ্যে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ সমাপ্তকরণ, রূপসা নদী ও মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি, সুন্দরবন ভ্রমণে যাবতীয় সুবিধাসহ ট্যুরিস্ট স্পট স্থাপনসহ মোংলা নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ ইত্যাদি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে ৩-৫ বছর সময় লাগবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হবে।
কমোডর ফারুক হাসান বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের চেয়ে গাড়ি আমদানিতে মোংলা বন্দরে সুবিধা বেশি। তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আনতে আমদানিকারকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। যে কারণে বর্তমানে ইয়ার্ডে গাড়ি রাখার জায়গা নেই।
তিনি জানান, গত বছর ১৫ হাজারের অধিক গাড়ি এসেছে। এ বছর আশা করা যায় ২০ হাজারের উপর গাড়ি আসবে। ইয়ার্ডে এতো গাড়ি রাখার জায়গা নেই। কন্টিনার রাখার জায়গা নেই, মালামাল রাখারও জায়গা নেই।
বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোংলা বন্দর নিয়ে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে বন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে বন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্বও আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এমআরএম/এমজেএফ