প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এ বিস্ময়কর পরামর্শক ব্যয়ের চাহিদা ছেঁটে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। নামিয়ে এনেছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকায়।
পিইসির ওই সভা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে আরও ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কেন্দ্র স্থাপনে গৃহীত প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন এই অযৌক্তিক ব্যয় কর্তন করে মাত্র ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা করেছে। অর্থাৎ ছেঁটে দিয়েছে ২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গৃহীত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ওই মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগে প্রায় ১০০ কোটি ডলার (৮ হাজার কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পরে এক বছর সময় বাড়িয়ে মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর।
এই অর্থছাঁটের কারণে প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম ১৬ মাসে ১৮ পরামর্শকের পেছনে ২৬ লাখ ৬১ হাজার কোটি ব্যয় বিবেচনায় সব খাত খাত মিলিয়ে পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বল্প সময়ে পরামর্শক সেবা বাবদ এতো বেশি অর্থ খরচ করা সম্ভব নয় বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। কেবল তাই নয়, পরামর্শক নিয়োগ ও ব্যয়ে এই বিপুল অংকের পরিবর্তন এলেও পরিকল্পনা কমিশনের নীতিগত সম্মতি নেওয়া হয়নি বিধায় ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম-প্রধান (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের পরামর্শক সেবা বাবদ মূল ডিপিপিতে ৩০ কোটি ১৮ লাখ ব্যয় দেখানো হয়েছে। এটা কমিয়ে ৪ কোটি ৩৩ লাখে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি, যতো পরামর্শক সেবা কমানো যায়। শুধু পরামর্শক সেবা খাত নয়, আমরা সবসময় অন্যান্য খাতের ব্যয়ও কমানোর চেষ্টা করি। তবে অধিকাংশ প্রকল্পে অস্বাভাবিকভাবে পরামর্শক ব্যয় হয়ে থাকে।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরামর্শক ব্যয়ে বাড়াবাড়ি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে পরামর্শক ব্যয় কমানোরও নির্দেশ দেন তিনি। এরপরও এমনভাবে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো বিস্মিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
বাড়তি পরামর্শক ব্যয় নির্ধারণ প্রসঙ্গে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ার করিয়ারদিয়া ১২শ’ মেগাওয়াটের একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলমান। ওই প্রকল্প থেকে ধারণা নিয়ে আমরা মহেশখালীর এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শক ব্যয় নির্ধারণ করেছিলাম। বাস্তবে এতো পরামর্শক ব্যয় লাগছে না।
বাড়তি ব্যয় ধরা প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, কয়লাভিত্তিক প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশীয় পরামর্শক দিয়ে হয় না। প্রকল্পে ৪ জন থাকলে যে আইডিয়া পাবো, ৫ জন থাকলে আরও বেশি পাবো। সুতরাং বেশি পরামর্শক থাকলে ইতিবাচক দিকও আছে। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সিভিল, ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল বিষয়াদিসহ নানা কাজ থাকে। ফলে পরামর্শকও বেশি লাগে। আমাদের দেশীয় পরামর্শক দিয়ে এসব কাজ হয় না। তাই বিদেশি পরামর্শক সেবা নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না।
অবশ্য প্রকল্পটির পরামর্শক খাতে ব্যয় কমলেও বাড়ছে অন্যান্য খাতে। সম্ভাব্যতা যাচাই কাজে ব্যয় বাড়ছে ২১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ছিল ৮১৫ কোটি ৮৪ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও সুরক্ষা এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এরপর শুরু হবে মূল নির্মাণ কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/