অর্থায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) চিঠি দিয়ে সাড়া না পাওয়া এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যয়ের সঙ্গে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি বিবেচনা করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এলএনজি অর্থায়ন বিষয়ক গঠিত কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন যেভাবে ঋণ নেয়, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ঋণ নেওয়া যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছে কমিটি।
যথাসময়ে এ অর্থের সংস্থান হলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এলএনজি আমদানি শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানিয়েছেন।
এলএনজি আলাদা কোনো জ্বালানি নয়, আদতে এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে এ গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়।
ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) যে পাঁচটি সহযোগী সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) তাদের একটি। বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বিশেষ করে তেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় সৌদি আরবভিত্তিক লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, মূল জাহাজ থেকে ভাসমান জাহাজে তেল খালাস এবং রিগ্যাসিফিকেশন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে এলএনজি। প্রাথমিকভাবে কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রাস গ্যাস থেকে এলএনজি আমদানি করে তা এক্সিলারেট এনার্জির এফএসআরইউর (ভাসমান টার্মিনাল) মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
এ ছাড়া জিটুজি ভিত্তিতে ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কাছ থেকেও এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। বছরে মোট ৬০ কার্গো জাহাজ আসবে। এতে ব্যয় হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা সংস্থান করার ঘোষণা দিয়েছে।
এলএনজি অর্থায়ন বিষয়ক গঠিত কমিটির বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি ঋণ দেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন একচেঞ্জ বিভাগ আইটিএফসির সঙ্গে যোগাযোগ করবে। আইটিএফসির ঋণের সুদ বর্তমানে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সুদ কমানোর জন্য প্রয়োজনে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ (ইআরডি)। আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরামর্শ গ্রহণ করবে।
জানা গেছে, এলএনজির আমদানিতে অর্থায়নের সম্ভাব্য সোর্স নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থের উৎস পরীক্ষা ও এ বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরিতে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর এই কমিটি গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এলএনজি আমদানির জন্য বিইআরসি আমাদের ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি অর্থ বিদেশি কোন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়াও এলএনজি বিক্রয়ের অর্থ যথাসময়ে পাওয়া গেলে অর্থায়ন নিয়ে আর কোন সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসই/এসএইচ