মঙ্গলবার (ফেব্রুয়ারি ২৭) বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বিমা শিল্পের বর্তমান: বিরাজমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানসহ বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইয়ের চেয়ারম্যান ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে, সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস ও বোরহান উদ্দিন, জীবন বিমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. শেলীনা আফরোজা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি জালালুল আজিম, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান তৌহিদ সামাদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বলেন, বিমা খাতে গ্রাহকদের অনাস্থা ও ইমেজ সংকট রয়েছে। এ দু’টো দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই মিলে অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে গতিশীল করতে চাই। এটি একটি মহৎ পেশা, এটা সবাইকে বুঝাতে হবে।
আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, কমিশন নিয়ে সমস্যা সমাধান না করলে নতুন করে বাজার সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না। এটা লাইফ আর নন-লাইফ হোক। এজেন্টদের কমিশন দেওয়ার যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিমা নীতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা বিমা নীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে নতুন করে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি বেশ কিছু আইনের পরিবর্তন করা যেতে পারে।
এসবিসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেন, বিমা খাতের আস্থার অভাব রয়েছে। তার কারণ একই ব্যক্তির কাছে পলিসির জন্য সব কোম্পানির লোকেরাই যায়। কিন্তু কোনো নতুন প্রোডাক্ট ডিজাইনের কোম্পানিগুলো গুরুত্ব দেয় না। কোম্পানিগুলোকে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট, ই-প্রোডাক্টসহ নতুন ও আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট বাজারে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং দেশে প্রচার রয়েছে, কিন্তু ইসলামী বিমা সেই ক্ষেত্রে প্রচার নেই। এটা প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে হবে। এ ছাড়াও পুন:বিমা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে । এটা বন্ধ করা দরকার।
মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্সগুলোকে দেখার কেউ নেই। বিমা কোম্পানিতে নিয়মিত অডিট হচ্ছে না। আইডিআরএকে অন্তত ২ বছর পরপর অডিট করতে হবে। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির এমডিকে গ্রাহকদের টাকা সঠিক ভাবে দেখাশোনার জন্য আইডিআরএকে তদারকি হবে।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ বলেন, জীবন বিমা কোম্পানির উন্নয়নে এজেন্ট দিয়ে বিমা পলিসি বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে পলিসি বিক্রি করতে হবে। ব্যাংক অ্যাসুরেন্স (ব্যাংক গ্যারান্টিতে বিমা) বিমা বাধ্যতামূলক করা দরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনা আসা দরকার।
এছাড়াও নতুন করে স্কুল ব্যাংকিংকে বিমার আওতায় আনার পাশাপাশি ব্যাংক ও গামেন্টসহ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রুপ বিমায় অনিহা প্রকাশ করছে। সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা দরকার।
সেমিনারে একেএম মনিরুল হক বলেন, দেশের অর্থনীতির তুলনায় বেশি বিমা কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে বিমা খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে দক্ষ বিমা বিক্রিয় কর্মী নেই। দেশের স্কুল কলেজের বিমা সম্পর্কে পড়াশুনার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি এমডি বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বিমা কোম্পানির এমডি নিয়োগে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ রয়েছে। এটা আরো কমানোর পাশাপাশি বিমা সম্পর্কে প্রচারণা বৃদ্ধি করা দরকার।
রূপালি ইন্স্যুরেন্সের এমডি পিকে রয় বলেন, বিমা নীতিতে যে পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ