বিশ্লেষকরা বলছেন, শিল্পঋণ বিতরণে অনেক ঝুঁকি থাকলেও কৃষিঋণ বিতরণে তেমন ঝুঁকি নেই। তাই ব্যাংকগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্রিয় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৮টি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি নয় মাসে বিতরণ করেছে তিন হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
একই সময়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করেছে এক হাজার ৫১ কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৮ শতাংশ। এ অর্থবছরে রাকাবের লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারিখাতের ইসলামী ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৯৯৭ কোটি টাকার ঋণ। যা ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
পরিমাণের ধারাবাহিকতায় পরের অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। ৯ মাসে ৬২৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৫৩১ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ। ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ৬৬০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড। আর চলতি অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দি ফারমার্স ব্যাংকের। যার শুন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ অর্থাৎ নয় মাসে এক কোটি ২৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ বিভাগ বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করার কথা কৃষিঋণ নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি অনুযায়ী, শস্য বা ফল চাষের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি প্রতিবেদন ও তদন্তের প্রয়োজন হবে না।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকের সব ঋণের সুদের হার কমে যায়। তাতে কৃষি ঋণের সুদের হারের কাছাকাছি অন্যান্য ঋণের সুদ চলে আসায় এ খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলো। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ায় কৃষিঋণের বিতরণও বেড়েছিলো। ফলে নয় মাসে আশানূরূপ ঋণ গিয়েছে কৃষিখাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, শিল্পপতিরা ঋণ নিয়ে যেভাবে আটকে রেখেছেন তাতে ব্যাংকগুলোর উচিত এসএমই ও কৃষিঋণের দিকে নজর বাড়ানো। এখাতে ঋণ খেলাপির হার অন্যসব ঋণের তুলনায় কম। তাই ঝুঁকিও কম।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এসই/জেডএস