গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের কাছে তামাক পণ্য নিষিদ্ধ করতে একটি চিঠি লেখেন অর্থমন্ত্রী। ওই চিঠিতে তিনি দুই বছরের মধ্যে বিড়ি শিল্প তুলে দেওয়া এবং ২২ বছরের মধ্যে সিগারেট তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই কর্মসংস্থান হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিড়ি শ্রমিক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের শ্রমিকদের মধ্যে কর্মসংস্থান হারানোর ভয় বেশি। যশোর, কুষ্টিয়াসহ বিড়ি শিল্প এলাকার শ্রমিকরাও কর্মসংস্থান হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের বৈষম্যমূলক করনীতির কারণে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিড়ি ফ্যাক্টরি। দিন দিন লোকসান দিয়ে আর টিকে থাকতে পারছেন না অনেক শিল্প মালিক। ইতোমধ্যে লাখ লাখ শ্রমিক জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। দেখা দিচ্ছে নানা সামাজিক বিশৃঙ্খলা। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা নতুন করে সংকটের শঙ্কা জাগাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মনে।
তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী একবারও সিগারেট বন্ধের কথা বলেন না। এবারও তিনি বিড়ি শিল্প বন্ধে দুই বছর সময় দিয়েছেন। সিগারেট বন্ধে সময় দিয়েছেন ২২ বছর। সিগারেট শিল্পের প্রতি তার এই পক্ষপাত কেন? শ্রমিকরা এই প্রশ্ন তুলে বলেন, ক্ষতির কথা বিবেচনা করে যদি বন্ধ করতে হয় তাহলে দু’টোকেই একসঙ্গে বন্ধ করে দেন।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, অর্থমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির পক্ষ নিয়েছেন। এ কারণে ২২ বছর সিগারেট রেখে তিনি ২ বছরের মধ্যে বিড়ি বন্ধ করতে চান।
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে আমিন উদ্দিন বিএসসি আরও বলেন, তিনি হয়তো জানেন না বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১৫ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবার। তার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার পথে বসে যাবে। অনাহারে মারা যাবে। অন্যদিকে তার এই সিদ্ধান্তের ফলে সিগারেট কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। এমনিতেই ব্রিটিশ বেনিয়া এই কোম্পানি প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় এবং বিদেশে অর্থ পাচার করে।
এই প্রস্তাব থেকে অর্থমন্ত্রীকে সরে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় সিগারেট-বিড়ির এই বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। আইয়ুব শাহী বিড়ি শিল্পবন্ধ করেছিলেন। তার পতন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বিড়ি শিল্প চালু করে গরিব মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। এই প্রস্তাব থেকে সরে না এলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তার দায় নিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এসআই/এইচএ/