ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ছোলার দামে স্বস্তি, বাড়বে না রমজানেও

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৮
ছোলার দামে স্বস্তি, বাড়বে না রমজানেও চকবাজারে আড়ৎ থেকে নামানো হচ্ছে ছোলার বস্তা/ছবি- জি এম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজারের হাজি স্টোরে প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা খুচরায় প্রকারভেদে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোলার ডালের দাম ৯০ টাকা। এই দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, ছোলার দাম কয়েক মাস ধরেই কমতি। পাইকারি বাজার থেকে জেনেছি আসছে রমজানে ছোলার দাম বাড়বে না।
 

নগরীতে অন্যতম ছোলার পাইকারি বাজার চকবাজারের ওয়াটার ওয়াকার্স রোড। এই রোড ডালপট্টি নামেও পরিচিত।

এখানে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কমতে শুরু করেছে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম। বিভিন্ন সময়ে কমতে কমতে এখন পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৫৭ টাকা, বার্মিজ ছোলা ৬৮ টাকা, কানাডিয়ান ছোলা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা না থাকায় চকবাজারে দেশি ছোলা নেই বললেই চলে।

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই ছোলার দাম কমতে শুরু করেছে। গত ডিসেম্বরে মানভেদে ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিলো। এখন অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি ভালোমানের ছোলা পাইকারি বাজারে ৫৭ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে বাজারে ছোলার দাম কমে যাচ্ছে।
 
দেশের বাজারে ৭৫ শতাংশর বেশি ছোলা আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। এছাড়া দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি মিয়ানমার, কানাডা ও ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমেও ছোলার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা হয়। এবার চাহিদার তুলনায় প্রচুর পরিমাণে ছোলা আমদানি হয়েছে, তাই সামনে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
 
হাজি জাহিদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পাইকারি ছোলা বিক্রেতা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেইন বাংলানিউজকে বলেন, ছোলার দাম প্রতিনিয়তই কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম কম। রমজান মাসে ছোলার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং কমবে বলে মনে করেন তিনি।

রমজান উপলক্ষে পাইকারি বাজারে এখনও ছোলা বেচাকেনা তেমন শুরু হয়নি। রমজানের এক সপ্তাহ আগে বেচাকেনা শুরু হবে। এবার স্বস্তি নিয়ে মানুষ রমজানে ছোলা কিনবে বলে জানিয়েছেন পাইকাররা।
 
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ নেসার উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়তই ছোলার দাম কমছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ছোলা দেশে আমদানি হচ্ছে। অনেক ছোলা পাইপ লাইনে আছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশের পথে।
 
রমজান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রমজানের কেনাকাটা এখনও শুরু হয়নি। আশা করছি এক সপ্তাহ আগে বেচাকেনা শুরু হবে।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ছোলা আমদানির পরিমাণ ৫ দশমিক ০৮ লাখ মেট্রিক টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ ১ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন।
 
অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) সূত্র জানায়,  ছোলার ডালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। বছরে দেশে ছোলার উৎপাদন হয় মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টন, বাকি ছোলা আমদানি করা হয়।
 
ছোলার আবাদ পোকামাকড়ে নষ্ট করে ফেলে। এই আবাদ সময় সাপেক্ষ, ১২৫ থেকে ১৩০ দিন লাগে। দেশে যশোর, ফরিদপুর ও রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ছাড়া ছোলার আবাদ হয় না। তাই অধিকাংশ ছোলা আমদানি করতে হয়।
 
ডাল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (বিএআরআই) ড. মোহাম্মদ  হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়তই ছোলার চাহিদা বাড়ছে। অথচ দেশে ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন হয় না। ছোলার আবাদ পোকামাকড়ে নষ্ট করে ফেলে। এছাড়াও ছোলার আবাদ কৃষকেরা লাভজনক মনে করে না। ফলে এই আবাদে কৃষকের অনিহা বেশি।
 
আমদানি নির্ভরতা কমাতে হলে ছোলার নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের তাগিদ দেন এ গবেষক।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।