বুধবার (৯ মে) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় একথা বলেন তিনি।
মুহিত বলেন, করপোরেট ট্যাক্স অত্যন্ত হাই।
তিনি আরও বলেন, আগে জনগণ ট্যাক্স রিটার্নটা তৈরি করতো না। এখন দেখছি, তাদের কাছে ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করা কিছুই না। সবাই মনে করে এটা করবো। সরকার আমাদের কাছে পায় সেটা দেবো। আগে আমাদের মধ্যে একটা ভীতি ছিল একবার ট্যাক্স দিলে আটকা পড়বো, আর বের হতে পারবো না। এই ভীতি এখন আর নেই। আমি মনে করে আমাদের প্রশাসন এ বিষয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এই সরকারের ৯-১০ বছরে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার। বিশেষ গুরুত্ব পাবে শিক্ষা, যোগাযোগ, জ্বালানি খাতে। রফতানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। বরাদ্দ বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে।
পরবর্তী সরকার আওয়ামী লীগের হবে সেটা আমার মতে ১০০ পারসেন্ট। তাহলে সরকারের চেইন স্টাইল পরিবর্তন হবে। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা প্রত্যেক জেলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও শক্তিশালী করা হবে। আমি যে উদ্দেশে জেলা বাজেট দিয়েছিলাম, সেটি হয়ে গেছে। এখন যা দিচ্ছি, সেটা শুধু ফরমালিটিজ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, আমাদের আইনে আছে, যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে পারবে বড় ধরনের একটি জরিমানা দিয়ে। এটি অনেক বছর ধরে চলে আসছে। অনেক সময় এটা হয়। অনেকের অপ্রদর্শিত আয় থাকে। সেটা যদি সরকারে কোষাগারে আসে ভালো। টাকা পাচার নিয়ে আমাদের যতো কথাবার্তা হয়। আসলে ততো টাকা পাচার হয় না। একসময় হতো। যখন মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম করা যেত। মালয়েশিয়ায় এটা কমে যাচ্ছে। কারণ মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চাইলে আমাদের তথ্য দেয়। দুবাইতে হতো। এখন দুবাই সরকারই যথেষ্ট আপত্তি করে। সেখানে বাড়ি কেনা অনেক সহজ ছিল। এখন সরকার অর্থের উৎস জানতে চায়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অতিসত্বর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার রিভিউ করা হবে। বছর দুই আগে আমরা যেটা করেছি। ব্যাংকের সুদ এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের মধ্যে কিছুটা তফাৎ রাখা। বাজারে কেউ ১০ টাকা পেলে আমরা চাই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ১০ বা ১১ টাকা পাক। আমরা এ দু’টির সঙ্গে তুলনা করি। এখন তফাৎটা অনেক বেশি হয়ে গেছে।
অনেক মানুষ এখন বিদেশ থেকে এসে দেশে বিনিয়োগ করছে। দেশে এখন ওই অবস্থা নেই, বিপদজ্জনক এখানে কিছু করবো না। কারণ ২০১৫ সালের পর দেশ থেকে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও এগুলো বিতাড়িত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। আমি খেয়াল করছি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখন বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও আসার পদক্ষেপ নেবে।
টোবাকো ট্যাক্স নিয়ে আমরা চিন্তা করছি, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে আছে সর্বোচ্চ এতো পর্যন্ত, সর্বনিম্ন এতো পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে অতিসত্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরাও থাকবে। একটি দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর কেউই উচ্চমানের সিগারেট উৎপাদনে ইচ্ছুক নন। তারা বিড়ি দিয়ে শুরু করেন। পরে অন্য শিল্পে চলে যান, তারপর সিগারেট ভুলে যান। আকিজ বিড়ির টোবাকোতে বিনিয়োগ এখন খুব কম। তারা এখন অন্যত্র চলে গেছে।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিজভী নেওয়াজ, সালাউদ্দিন বাবুল, সংগঠনের সাবেক নেতা, জাকারিয়া কাজল, মনোয়ার হোসেন, শাহনেওয়াজ, আবু কাওসার, সুলতান মাহমুদ, খাজা মাইনুদ্দিন প্রমুখ।
এসময় অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৯৯ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
এসই/আরবি/