রমজান এলেই এই সুস্বাদু ফলটির কদর বেড়ে যায়। শুক্রবার (১৮ মে) রোজার প্রথম রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরেও এমনটাই দেখা গেছে।
বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে ইফতারের জন্য খেজুর কিনছিলেন রায়হান মোস্তফা। খেজুর কেনা প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, একজন রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। ইফতারির মাধ্যমে একজন রোজাদার তার রোজা শেষ করেন। রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা) খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন অথবা একটু পানি পান করতেন।
‘এজন্যই ইফতারে খেজুর আমাদের দেশেও বেশ সমাদৃত। তবে এটি সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরে বেশ এনার্জিও এনে দেয়। তাই তো প্রতিদিনের ইফতারিতে খেজুর থাকবেই। ’
রোজায় বাংলাদেশে মুসলমানদের ইফতারে অপরিহার্য একটি খাবার হলো খেজুর। বলা হয়ে থাকে, এ সময়েই দেশে সবচেয়ে বেশি খেজুর আমদানি ও বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের খেজুর উৎপাদিত হয় না বললেই চলে। মূলত বিদেশ থেকেই আমদানি হয়। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে খেজুরের মতো একটি ফল এত জনপ্রিয় হলো কিভাবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম খাদেমুল হক বলেন, এটা তো রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হযরত মোহাম্মদ (সা) রোজা খোলার সময় অর্থাৎ ইফতারে খেজুর খেতেন। সে কারণে মনে করা হয় এটা ভালো অনুষঙ্গ। সেজন্যই বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত।
তিনি বলেন, অন্য সময় তো কেউ এতো চিন্তা করে না, আর এটি বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেও জড়িত নয়; সেজন্য অন্য সময় ততো টা জনপ্রিয় নয় এটা।
রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে প্রথমেই সবাই খেজুর খেয়ে থাকেন। এর একটি কারণ হয় তো এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের একটি অন্যতম খাবার হলো খেজুর এবং এ সংস্কৃতি সারা বিশ্বেই অনুসৃত হয়। তবে এর বৈজ্ঞানিক দিকও আছে।
খেজুর প্রচুর ক্যালরি বা শক্তিদায়ক একটি ফল। প্রচুর শর্করা থাকার কারণে খাবার আধা-ঘণ্টার মধ্যে এটি বাড়তি শক্তি জোগাতে সক্ষম। এছাড়া এটি দ্রুত মস্তিষ্কের খিদে কেন্দ্রকে উজ্জীবিত করে খিদে মেটায় ও আরও বেশি খাবার ইচ্ছা থেকে বিরত রাখে।
আরও একটি কারণ হলো, এর মধ্যে আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। খেজুর কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর এটি পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। এমন খেজুর খেলে আরও বেশি উপকার মেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে।
প্রচুর পটাশিয়াম আছে এতে। এছাড়া এর পটাশিয়াম দ্রুত স্নায়ু ব্যবস্থার অবসন্নভাব দূর করে ও তরতাজা ভাব এনে দেয় রোজাদারদের। ওজন বাড়াতে ও রক্তশূন্যতা দূর করতেও এটি বেশ উপকারী।
মরুভূমির শুকনো আবহাওয়ায় মিষ্টি খেজুর উপকারী। রোজার পর অবসাদগ্রস্ত দেহে দ্রুত চাঙ্গাভাব এনে দেয় খেজুর। আর তাই ইফতারিতে খেজুর একটি অন্যতম প্রধান খাবার। কোনো দেশ থেকে খেজুরগুলো আসছে এবং এর আকৃতি কেমন, তার উপর নির্ভর করে খেজুরের দাম। রয়েছে বিভিন্ন নাম ও প্রকারভেদও।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইরানের মারিয়ম খেজুর গুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০ টাকা দরে। সৌদি মারিয়ম ১২০০ টাকা। রয়েছে বড় কালো রঙের আনজেরিয়া, প্রতিকেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
সৌদি আনবার প্রতিকেজি ২৪০০ টাকা। বারারি প্রতি প্যাকেট ২৫০, এপ্রিকেটস ৩০০ এবং টার্কিশ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা প্রতি প্যাকেট। এছাড়া রয়েছে সাধারণ খোলা খেজুর ও প্যাকেটজাত শুকনা খেজুর। প্রকারভেদে যার বাজার মূল্য প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
পুরানা পল্টন এলাকার খেজুর ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, রমজানের এ সময়টাতে খেজুরের চাহিদা অন্য সময়ের থেকে একটু বেশিই থাকে। বেচা-কেনাও বেশ ভালো। কেননা ইফতারিতে অন্যকিছু থাক বা না থাক, সবারই একটু খেজুর চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৮
এইচএমএস/এমএ