সরেজমিনে রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ভিড় থাকলেও অধিকাংশই ঘুরতে এসেছেন। এখনো তেমন বেচা-কেনা হচ্ছে না।
ক্রেতার বলছেন, মাসের শেষদিক হওয়ায় পকেটে এখনো টাকা আসেনি। বেতন পেলে কেনাকাটা শুরু করবেন। তবে আগে থেকে জিনিস পত্রের দামের বিষয়ে ধারণা নেওয়ার জন্য অনেকে ঘুরে গুরে দেখছেন।
মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব বছরের দু’টি ঈদ। এক মাস রোজা রাখার পর বছরের প্রথম সেই আনন্দের ঈদুল ফিতরের আনন্দের সঙ্গে মিশে থাকে সর্বস্তরের মানুষের ঈদ কেন্দ্রিক কেনাকাটা। সাধারণত রমজানের প্রথম ১০ দিনের পর থেকে মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে মানুষজনের ভিড় লেগে বাড়বে। কিন্তু অনেক সময় তার আগেই মার্কেটগুলোতে ভিড় শুরু হয়।
সরকারি ছুটির দিনে রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া এলাকায় পা ফেলার জায়গা না থাকলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলো মোটামুটি তুলনাকমূলকভাবে ফাঁকাই যাচ্ছে। আর যারাও আসছেন তাদের বেশিরভাগই ঘোরাঘুরি করতে আসছেন, কিনতে নয়।
শনিবার (২৬ মে) সরকারি ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতাদের বেশ নাখোশই মনে হলো।
নিউমার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত যা বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ শিশু আইটেম। মেয়েদের শাড়ি, থ্রি পিসসহ অন্যান্য জামাগুলো বিক্রি হলেও তার হার খুবই কম। আর ছেলেদের আইটেমগুলো পুরোপুরি প্রদর্শনীতেই শোভা পাচ্ছে। আর যা বিক্রি হয়েছে তা ওই দুই শুক্রবার। গতকালকে চাপ ছিলো। শনিবারেও চাপ থাকার প্রত্যাশা করলেও বিকেল পর্যন্ত তা নেই। এছাড়া যে পরিমাণ ক্রেতারা মার্কেটে ভিড় করছেন তাদের অধিকাংশরাই আসছেন এক প্রকার বাজার পরিদর্শনে। তারা এসে দাম জেনে যাচ্ছেন, কিন্তু কিনছেন না।
নিউমার্কেটের শালিমার শাড়ি হাউজের বিক্রেতা আজিজ বলেন, আমাদের পাইকারি বিক্রি করা শেষ। ঈদের আগ পর্যন্ত গোডাউন পরিপূর্ণ রেখে আমরা খুচরা বাজারে মনযোগ দিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম এবার আগে থেকেই ভিড় থাকবে। কারণ অনেকেই এখন এ যানজট ও ভিড় একেবারে পছন্দ করে না। আবার খবর পাচ্ছি অনেকেই কলকাতা চলে যাচ্ছে শপিং-এর জন্য। কেননা এখন কলকাতা যেতেও কম টাকা লাগে, আর যাওয়ার পদ্ধতিও যথেষ্ঠ সহজ। তাছাড়া কলকাতায় দামও যথেষ্ঠ কম এখানকার তুলনায়। তবে কলকাতায় বাংলাদেশি শাড়িরই প্রভাব বা কদর বেশি, যা এদেশে সব জায়গাতেই পাওয়া যায়।
এদিকে আক্ষেপের সুরে রফিক ট্রেডার্সের ম্যানেজার জিয়া জানান, শনিবারও তো সরকারি ছুটি। তাও ভিড় নেই। গতকাল ছিলো। আর ইদানিং গরম যা পড়ছে তাতে মানুষ ওভাবে বের হয় না। একবারেই সব কাজ সেরে ঘরে ফিরতে চায়। তাই হয়তো আসবে পরে। এদিকে যা বিক্রি হচ্ছে সব শিশুদের আইটেম।
আবার যারা মার্কেটে আসছেন তাদের সবার মুখে যথেষ্ট বিরক্তির ছাপ রয়েছে গরম ও যানজটের কারণে। কেননা সপ্তাহের মঙ্গলবার (এই এলাকার মার্কেটগুলোর বন্ধের দিন) ছাড়া প্রতিদিন তীব্র যানজট থাকে। উৎসবের আগে তা মহামারি আকারে দেখা যায়। আর মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম হবার অন্যতম কারণ হিসেবে জানা যায়, মাসের শেষ দিক হবার কারণে। কেননা রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষই চাকরিজীবী।
নিউমার্কেটে আসা জুনায়েদ-রাহি দম্পতি বাংলানিউজকে জানান, মাসের শেষের দিক এখন। হাতের অবস্থা তো একটু খারাপ থাকবে স্বাভাবিক। তাই এখন যেহেতু সময় পেয়েছি তাই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তাদের জন্য ঈদের উপহার কিনতে এসেছি। আর নিজেদের ও বাবা-মার জন্য পরে বেতন পেয়ে কিনবো। তবে এবারে কালেকশনের পরিমাণ গতবারের চেয়ে কম দেখছি। আশা করি আরও আসবে। মাত্র তো কেনাকাটা শুরু হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী লিমা তার বন্ধুদের নিয়ে নিউমার্কেটে এসেছেন কাপড় দেখতে। তাদের বক্তব্য, এখনও টিউশনি থেকে বা বাসা থেকে টাকা পাইনি। পেলেই শপিং করবো। তার আগে এসে দামের ধারণা নিচ্ছি ও ঘুরে দেখছি কি কেনা যায়। একই লক্ষ্যে মার্কেটে আসছেন অনেকেই। তাছাড়া অনেকেই আবার ঈদের আগ দিয়ে কিনতে ভালোবাসেন এবং এই সময়ে পছন্দসই জিনিসের দাম জানতে আসেন।
এদিকে নিউমার্কেটের এই অবস্থা থাকলেও তার ঠিক উল্টোপাশে গাউছিয়ায় ভিড়ের জন্য পা ফেলানোর কোনো জায়গা নেই এবং এর ৯০ ভাগ নারী ক্রেতা। গাইছিয়ার এক কাপড় বিক্রেতা খুব ব্যস্ততার ফাঁকে বাংলানিউজকে জানান, এখানে পহেলা রমজান থেকেই মোটামুটি ভিড় আছে। তবে গতকাল থেকে চাপ অতিরিক্ত হারে বেড়েছে। যা আমাদের ভাবনার চেয়েও বেশি। আর এভাবে চলতে থাকলে ঈদের অনেক আগেই আমাদের গোডাউন খালি হয়ে যাবে। আবার পাইকারি ক্রেতাদের কাছে যেতে হবে। আর এখানে বিদেশি থ্রি-পিসের জন্যই নারীরা বেশি ভিড় করে। বিশেষ করে পাকিস্তানি থি-পিস।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ