বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চলে বছরের পর বছর এ বোম্বাই মরিচের চাষ হয়ে আসছে। আর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় বছরে শতকোটি টাকা আয় করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় চাষীরা জানান, একসময় এই মরিচ ঘরোয়া চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির বাগান কিংবা আঙিনায় লাগানো হতো। তখন কেউই ভাবতো না এর বৃহত্তর চাষের কথা। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বড় পরিসরে বোম্বাই মরিচের চাষ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দিনে দিনে বোম্বাই মরিচের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাষির পাশাপাশি আবাদের পরিমাণও বাড়ছে। কৃষকরাও ভালো দর পাচ্ছেন বোম্বাই মরিচ বিক্রি করে। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ও চাষি মানিক মিস্ত্রী জানান, গত ৫ বছর ধরে তিনি বোম্বাই মরিচের আবাদ করছেন। বর্তমানে ১৫ কাঠার জমিতে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ৯শ’র মতো বোম্বাই মরিচ গাছ রয়েছে। গেলো শীতের শেষ দিকে কুয়াশা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে ফলন একটু কম হলেও খারাপ ছিলো না উৎপাদন।
নেছারাবাদ উপজেলার চাষি রণজিৎ হালদার জানান, মূলত বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাস বোম্বাই মরিচের মৌসুম। তবে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাজারে এ মরিচের দেখা মেলে। তিনি তার চাষের জমিতে পেঁপে, কাঁচাকলা, লেবু গাছ লাগিয়েছেন। যার মধ্যে মরিচের চাষও করছেন। বহুমুখি শস্যের চাষ করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করছেন।
বর্তমানে আটঘর-কুড়িয়ানার জিন্দাকাঠি কালীমন্দির মাঠে সোমবার ও শুক্রবারের হাটে আকার ভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকায় প্রতিশ’ বোম্বাই মরিচ বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে ভালোমানের কামরাঙা নামের বোম্বাই মরিচ শ’ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঘৃতকুমারী (ঘেউতা) ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং গুড়া আকারের বোম্বাই মরিচ ভর্তি প্রতি বস্তা ২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে চেলা নামের একটি বোম্বাই মরিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় প্রতিশ’ বিক্রি হচ্ছে। হাট ইজারাদাররা জানান, ফাল্গুন থেকে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত বোম্বাই মরিচের আমদানি বেশি হয়। এসময় প্রতি হাটে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে কয়েক লাখ টাকার মরিচ বেচাকেনা হয়। আর জিন্দাকাঠি বাজারের পাশে খাল ও সড়কপথ দু’টিই রয়েছে। তাই এ হাটে চাষিরা নৌকায় যেমন আসেন তেমনি সড়কপথেও সহজে পণ্য নিয়ে আসেন।
ঝালকাঠি সদরের ভীমরুলি এলাকার চাষী অনিল জানান, গত বছর কয়েক লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। এ বছরও ২/৩ লাখ টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন। তবে বাজারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দর অনেক কমেছে। যদিও প্রতিবছরই আমদানি বাড়লে দাম কমে যায়।
তিনি বলেন, প্রতি বছর বোম্বাই মরিচের চাষির সংখ্যা বাড়ছে। হালকা যত্ন নিলেও ভালো উৎপাদনের আশা করা যায় বলে এতে আগ্রহ বাড়ছে অন্য ফসল চাষিদের।
এদিকে এ অঞ্চলের বোম্বাই মরিচ গোটা দেশে বেশ সমাদৃত। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকাররা এ মরিচ নিয়ে যান সাধারণ ক্রেতাদের জন্য। তবে গত কয়েকবছর ধরে জাপানেও যাচ্ছে এ অঞ্চলের বোম্বাই মরিচ। এমনটা জানিয়েছেন নেছারাবাদের পাইকার ব্যবসায়ী তাপস। তিনি বলেন, গ্রামের হাট থেকে মরিচগুলো কিনে তাদের গদিতে (দোকান) এনে বাছাই করা হয়। বিভিন্ন কোয়ালিটি ও গ্রেডে ভাগ করা হয় বোম্বাই মরিচ। এরপর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
বেশি ঝালসহ গুণগতমানের দিক থেকে ভালো হওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে বরিশাল বিভাগের এ অঞ্চলের মরিচ জাপান পাঠানো হচ্ছে। যদিও সরাসরি নেছারাবাদ থেকে মরিচ জাপান যায় না।
তিনি বলেন, এখান থেকে বাছাইকৃত মরিচ নরসিংদীতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে জাপানে পাঠানো হয় মরিচ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর ধরে নেছারাবাদের স্থানীয় বেপারি আ. হক, মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মিলে এ অঞ্চলে উৎপাদিত বোম্বাই মরিচ জাপানে রপ্তানির জন্য পাঠান।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু হেনা মোহাম্মদ জাফর বাংলানিউজকে জানান, পিরোজপুর জেলা থেকে সরাসরি রপ্তানি হয় না মরিচ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অন্যত্র থেকে এটি করতে পারেন। তবে এ অঞ্চলে দিনে দিনে বোম্বাই মরিচের আবাদ বাড়ছে। চাষিরা কোন বছরই লোকসানের মুখে পরেছেন এমন তথ্য নেই। প্রতিবছরই এ অঞ্চলের মরিচের চাহিদা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
এমএস/জেডএস