জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা, যাতায়াতের অসুবিধা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবসহ নানামুখী সংকটে জর্জরিত সাতক্ষীরার এই শিল্প নগরী। নেই নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর।
সরেজমিন দেখা যায়, বিসিকের প্রাচীর না থাকায় গরু-ছাগল যত্র-তত্র ঘোরাফেরা করছে। নির্দিষ্ট ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ওপরেই পানি জমে আছে। সংস্কারের অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে রাস্তার ওপর। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। বিসিকের নির্দিষ্ট পানির প্লান্ট থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহারের উপযোগী নয়।
মাছের রেণু প্রক্রিয়াজাত ও বেকারির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিসিকে। বদ্ধ ড্রেনের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য রাস্তায় জমে থাকছে। বিসিক অঞ্চলে নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিভিন্ন সময়ে চুরির ঘটনাও ঘটছে। কিছু কিছু প্লটে কারখানার নাম-ঠিকানা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড পুঁতে রাখলেও নেই কোনো কার্যক্রম। এমনকি বিসিকের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি ভগ্ন দ্বিতল ভবনে। মাঝে মধ্যে পলেস্তারা খসিয়ে নতুন করে পলেস্তারা দেওয়া হয় ভবনটিতে।
শিল্প উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর বিরূপ মনোভাবের কারণে বিসিকের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
বিসিক সাতক্ষীরার একটি সূত্রে জানা গেছে, ৯৬টি প্লটের পাঁচটি বাদে সবকটিই বরাদ্দ দেওয়া শেষ। এর ভেতরে তিনটি আইনি জটিলতা ও দু’টি বিসিকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংরক্ষিত রয়েছে। ৩০টি শিল্প ইউনিটের বিপরীতে ৯১টি প্লট বরাদ্দ হলেও নানা জটিলতার কারণে বেশ কিছু কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম এখনও শুরু করতে পারেনি।
বিসিকে উৎপাদনরত বিসমিল্লাহ হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিসিকের পানিতে মাছের উৎপাদন ভালো হয় না। বিসিকের পানির প্লানটি বছরের অধিকাংশ সময়ই নষ্ট থাকে। হ্যাচারির সামনের রাস্তাটিরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াতের ব্যবস্থা খুবই নাজুক। হ্যাচারির পানি বের হওয়ার মতো ড্রেনের ব্যবস্থাও নেই এখানে। প্রতিনিয়ত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
চায়না বাংলা বেকারি ও প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার বিধান চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে জানান, কারখানার সামনের রাস্তা নিজ খরচে করেছেন তিনি। বিসিক শুধুমাত্র পিচ দিয়েছে রাস্তার ওপর। বিসিকের প্লান্টের পানিতে আয়রন থাকায় ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই নিজ খরচে ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। মানসম্পন্ন খাদ্য তৈরি করতে গেলে এই প্লান্টের পানির ওপর ভরসা করা চলে না।
তিনি আরো জানান, বর্জ্যগুলো নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। সেগুলো ফেলার মতো জায়গাও নেই। পানি নিষ্কাশনের পথ তো নেই-ই। বর্ষা মৌসুমে গোটা বিসিক শিল্প নগরী জলাবদ্ধ থাকে।
বরফ মিলের শ্রমিক মিলন হোসেন জানান, বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে যায়। কেউ নেই এগুলো দেখার। প্রতিবছরই এরকমভাবে কেটে যাচ্ছে। সামনের ড্রেনগুলোতে পানি জমে আছে দিনের পর দিন। তাতে সৃষ্টি হয়েছে মশা আর নানা রোগজীবাণু। বর্ষার পানি রাস্তায় উঠে গেলে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে।
বিসিকের প্লান্ট অপারেটর আব্দুর রশিদ জানান, প্লান্ট প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। বিভাগীয় অফিসে রিপেয়ারিং অর্ডার পাঠানো হলে তা আসতে বেশ সময় লাগে। সেজন্য সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করা যায় না।
বিসিকের একটি কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, এখানে যে বিসিক শিল্প নগরী, তা বোঝা যায় না। যেন গরু-ছাগলের চারণভূমি। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে বাইরের গরু-ছাগল ভেতরে আসে। এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বারবার সমস্যার কথা জানালেও এখন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ব্যবসা করতে হলে নিজ খরচেই সব করতে হবে-এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিসিকে। কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার বালাই নেই।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকের সহযোগী মনোভাবের অভাবে উন্নয়নের কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কোনো পরামর্শ দিলে তারা তা মেনে না নিয়ে বরং এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলেও সুযোগ-সুবিধার কোনো বালাই নেই বিসিকে। সর্বত্র শুধু সমস্যা আর সমস্যা। আমাদের কথা এখন আর বিসিকে মূল্যায়নই হয় না।
এ ব্যাপারে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সমাধানের। বাজেটের ঘাটতি, জনবল সংকটের কারণে এসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
একনেকে একটি বাজেটের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাজেট পাস হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
এসআই