মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না থাকলেও কর্মকর্তাদের ব্যবহারে ৫২টি ব্যয়বহুল গাড়ি কিনতে তোড়জোড় শুরু করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। গাড়ি কেনার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের শুরুতে অতিরিক্ত যানবাহন কেনা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকল্পের জন্য ৭৭টি যানবাহনে ৭৭ জন গাড়িচালক নিয়োগের আবেদন করে বিবিএস। একটি প্রকল্পে এত যানবাহন ও গাড়ি চালক নিয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে আপত্তি তোলে পরিকল্পনা কমিশন। ৩৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পে যদি এত গাড়ি কেনা হয় তবে গাড়িবাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা।
সরকারি খাত থেকে এত বেশি যানবাহন এক প্রকল্পে সংস্থান করা কঠিন বিবেচনায় তাই ৫২টি যানবাহনের অনুমতি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এখন প্রকল্পের অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে যানবাহন কেনা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। যানবাহনের অতিরিক্ত দাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অর্থবিভাগ।
বিবিএস সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় অফিসে ব্যবহারের জন্য একটি মটরগাড়ি (জিপ) ৬২ লাখ টাকা ও একটি ৫৬ লাখ টাকা দামের মাইক্রোবাসসহ ২৩ জেলায় ডাবল কেবিন পিকআপ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪১টি জেলা ও আটটি বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসে শুমারির কাজে ব্যবহারের জন্য ৫৬ লাখ টাকা হারে ৫০টি পিকআপের জন্য ২৪ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে।
একক সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে দরপত্র সংগ্রহ করে যানবাহন কেনায় বিবিএস-কে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। প্রতিটি ডাবল কেবিন পিকআপে ৫৬ লাখ, মাইক্রোবাসে ৫৬ লাখ এবং জিপ গাড়ি কেনার জন্য ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা অনুমোদন করেছে অর্থিবিভাগ। তবে অর্থবিভাগের সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছে বিবিএস। প্রকল্পের আওতায় আরও উন্নতমানের গাড়ির আবদার তাদের।
বিবিএস চায় ৯১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা মূল্যের ‘ক’ শ্রেণীর জিপগাড়ী। তবে বিবিএস-এর অযৌক্তিক আবদার নাকচ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ৫২টি গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাড়ি ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করাও কঠিন। এখন ধীরে ধীরে প্রকল্পের বাকি কাজ এগিয়ে যাবে।
অগ্রগতির বিষেয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনি অগ্রগতি দিয়ে কী করবেন? বলার মতো অগ্রগতি এখনও হয়নি!
বর্তমানে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৩৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৬ জন জনবল থাকার কথা। অথচ বর্তমানে মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কোনোরকমে চলছে প্রকল্পের অফিসিয়াল কাজ। মাঠ পর্যায়ে এখনও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
১০ বছর অন্তর অন্তর কৃষি শুমারি পরিচালিত হয়। ২০০৮ সালের চতুর্থ কৃষি শুমারির পর চলতি বছর পঞ্চম শুমারি হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত কৃষি শুমারিতে গ্রাম ও শহরের সব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী শুমারি। সরকারের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে কৃষি জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, কৃষক, শষ্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন এবং পাণিসম্পদ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার শুমারি গণনাকারী, ২৪ হাজার ৭০০ জন সুপারভাইজার, মাস্টার ট্রেইনার, জোনাল অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা থাকবেন। অথচ যানবাহন কেনা ব্যতীত প্রকল্পের বাকি কাজ এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ, বসতবাড়ির জন্য ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ ও কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের চিত্র তুলে ধরেছিলো কৃষি শুমারি-২০০৮। সেই শুমারি অনুযায়ী ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ দুই কোটি ২৯ লাখ একর। এর মধ্যে চাষের আওতায় আছে ১ কোটি ৮৮ লাখ একর। দেশের কৃষকদের বোরো ধান চাষে বেশি আগ্রহী হওয়ার চিত্রও উঠে এসেছে ওই শুমারিতে। এর আগে ১৯৭৭, ১৯৮৩-৮৪ ও ১৯৯৬ সালে অন্য তিনটি কৃষি শুমারি হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ