একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ হাটে ওপারের ক্রেতারা কম আসছেন। ক্রেতাদের অনুপস্থিতির কারণে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না।
সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যর চেয়ে ভারতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী কেনার জন্য দু'দেশের ক্রেতারা টিকিট কেটে হাটে প্রবেশ করেন। তবে বাংলাদেশের অনেক ক্রেতাই টিকিট না কেটে হাটে প্রবেশ করলেও ভারতীয় ক্রেতারা পারেন না। ফলে ভারতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ওপারের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রি করে চলে যাচ্ছে।
কথা হয় বর্ডার হাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মালু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাটে যে সংখ্যক মানুষের সমাগম হয় সে পরিমাণ বেচা-কেনা করতে পারি না। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যদি এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন সেখানে আমরা বিক্রি করি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। বাংলাদেশি ক্রেতা যদি আসে তিন হাজার আর ভারতীয় ক্রেতা আসে পাঁচশ’।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পণ্য বেচা-কেনা হয় দামাদামি করে। তাদের কাছে কোনো দাম ধরা নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তাদের পণ্য পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যান।
২০১৫ সালে জুন মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২০৩৯ নম্বর পিলার সংলগ্ন কমলা সাগর দীঘির উত্তর পাড়ে সপ্তাহে একদিন করে সীমান্ত হাট বসতে শুরু করে।
বাংলাদেশের ৬৯.৬৬ শতাংশ ও ভারতের ৬৯.৬৬ শতাংশ ভূমিতে বসছে হাট। সপ্তাহে একদিন রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাটের কার্যক্রম চলে। এ হাটে বাংলাদেশের ১৫ ও ভারতের ১৬টি পণ্য বিকিকিনি হয়।
বাংলাদেশ থেকে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী হল বিস্কুট, লুঙ্গি ফল-মূল, স্থানীয় কুটির শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী। ভারত থেকে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শাক-সবজি ফল-মূল, কসমেটিক্স, মসলা জাতীয় দ্রব্য, বনজ ও কুটির শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য, কৃষি উপকরণ, চা, এলুমিনিয়াম সামগ্রী ইত্যাদি।
ব্যবসায়ী জমির খান বাংলানিউজকে বলেন, এই হাটে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে যাদের বসতি রয়েছে তারাই মূলত এ হাট থেকে পণ্য-দ্রব্য কিনতে পারবেন। অথচ নিয়ম অমান্য করে জেলার বাইরে ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, সিলেট থেকে লোকজন এসে পাইকারি ও খুচরা মালামাল কিনে নিয়ে যায়। ফলে আমাদের পণ্য দ্রব্যের চাহিদা কম। সরকারের কাছে আমাদের দাবি নিয়ম মেনে হাটে মানুষজন আসুক। ভারতীয় নাগরিকরা যেমন সীমিত আসে। আমাদের বাংলাদেশি নাগরিকরা তেমন আসুক।
হাটের সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী হারনুর রশিদ বলেন, দোকানের সামনে ছাউনী না থাকায় হাটে আমাদের কাস্টমাররা এলে রৌদ্রের প্রচণ্ড তাপে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে কষ্ট হয় তাদের। আবার ঝড় বৃষ্টি হলেও সব মালামাল পানিতে ভিজে কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।
কথা হয় কুমিল্লা জেলা থেকে হাট দেখতে আসা হৃদয় হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি টিকিট ছাড়াই প্রবেশ করেছি। মূলত ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য এসেছি।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে আসা আমির হোসেন বলেন, আমি প্রায় সব সময় হাটে ঘুরতে আসি। বাংলাদেশের পণ্য থেকে ভারতীয় পণ্যের দাম খুব একটা কম নয়। তবুও উৎসাহের কারণেই আসি।
হাটের সার্বিক বিষয়ে নিয়ে কথা হলে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম বলেন, চেষ্টা করছি আমাদের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যেন ভারতীয় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারেন। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে হাট পরির্দশন করেছেন। হাটের মান উন্নয়ন নিয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ওয়াকসর্প করেছেন।
হাটে পাস কার্ড ছাড়াও লোক প্রবেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ডার হাটের ভেতরে প্রবেশের গেট নিয়ন্ত্রণ করে বিজিবি সদস্যরা। আমি শুধু এক হাজার পাস কার্ড নিয়ন্ত্রণ করি। নিয়ম হল আমি যে কার্ড দেই সেটা দেখে চেক করে তবেই বিজিবি সদস্যরা খাতায় রেজিস্ট্রি করে তাদের হাটে ঢুকতে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৮
আরএ