মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি হওয়ার তথ্য দিয়ে মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এস এম রবিউল হাসান বলেন, স্বর্ণ হেরফের হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। ভল্টে স্বর্ণ যেভাবে রাখা হয়েছিল সেভাবেই আছে। কোনো প্রকার হেরফের হয়নি। হেরফের করার কোনো সুযোগও নেই। ভল্টের ছয় স্তরের নিরাপত্তা আগের মতই খুব সুরক্ষিত আছে।
ওই দৈনিকের প্রতিবেদনে শুল্ক গোয়েন্দার বরাত দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা শুল্ক গোয়েন্দার নিজস্ব রিপোর্ট। এই রিপোর্টের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মেশিনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মেশিনের মাপের পার্থক্য হয়। এই মেশিন নিয়ে সন্দেহ আছে। তাছাড়া যেসব স্বর্ণ নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাই করার আবেদন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরও নিরাপত্তা পাস ভল্টে যেতে পারেন না জানিয়ে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভল্টে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশের আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। আদালতের নির্দেশে যেভাবে ভল্টে স্বর্ণ বা অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ রাখা হয়, ঠিক একইভাবে আদালতের নির্দেশেই বের করা হয়। সুতরাং ভল্ট থেকে কোনো কিছু হেরফের করা কোনো রকমেই সম্ভব নয়।
ভল্টের স্বর্ণের মান বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি ক্লারিক্যাল মিসটেকের (করণিক ভুল) কারণে স্বর্ণের মানের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআর ও শুল্ক গোয়েন্দাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
করণিক ভুলের ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোনার মান পরীক্ষার পদ্ধতির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ম্যানুয়ালি সোনার মান পরীক্ষা করে শুল্ক গোয়েন্দাকে সোনা গ্রহণের প্রত্যয়পত্র দেওয়া হয়। তবে সেখানে কিছু ক্লারিক্যাল মিসটেক ছিলো।
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার (শখ জুয়েলার্স) সোনা পরীক্ষা করে ৪০ শতাংশ সোনা বলে মত দেন। তবে সেটি ভুলে প্রত্যয়নে ৮০ (ইরেজিতে শব্দ মনে করে ৪০ কে ৮০ লেখা হয়) শতাংশ লেখা হয়। পরে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। তখন শুল্ক গোয়েন্দার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের এ সংক্রান্ত প্রত্যয়পত্রও দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারও পরে সেটি সংশোধন করেন। ’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন তাদের নিজেদের। তবে তদন্ত চলাচালে আমাদের সঙ্গে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধিতা ছিলো। তখন আমরা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সোনার মান পরীক্ষা করাতে আণবিক শক্তি কশিনের নাম প্রস্তাব করি। তাতে সংস্থাটি রাজি হয়নি।
ভল্টে রাখা সোনা মিশ্র ধাতু হয়ে যাওয়ার তথ্যের ব্যাপারে রবিউল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা ধাতু বদলে যাবার কোনো সুযোগ নেই। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুপার, সুপার এবং সুপার। তবে এখানে শুল্ক গোয়েন্দা অনুমতি নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করে। ওই সময় তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। সংস্থাটি ভাড়া করা মেশিন নিয়ে সোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসে। ফলে এটি তাদের নিজস্ব প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা তার প্রতিটি অংশ ব্যাখ্যা করে গত ১১ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে জবাব দিয়েছি।
এসময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী, কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জিএম সুলতান মাসুদ আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮/আপডেট ২১৫৯ ঘণ্টা
এসই/এমএ/এইচএ/