গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) এবং চলতি সপ্তাহের রোববার (২২ জুলাই) দুই কার্যদিবস দেখা গেছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের একদিকে ছিলো ক্রেতা সংকট। অন্যদিকে শেয়ারগুলোর দামও কমছে পাল্লা দিয়ে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মোস্তফা ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া যে কোনো সময় এসব কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর বন্ধ হয়ে গেলেই আমার পুরো টাকা জলে যাবে। জেনে শুনে কেন এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবো?
তিনি বলেন, ভাগ্যিস আমার হাতে থাকা রহিমা ফুডের ৫ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলাম। না হলে আজ কাগজ নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হতো। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘জাঙ্ক শেয়ার’ থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগে ফিরছেন, এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কমবে। বাজারে কমবে কারসাজি, বাড়বে আস্থা। এটি বাজারের জন্য আমূল পরিবর্তন। এটি আরো আগেই হওয়া উচিৎ ছিলো।
ডিএসইর তথ্য মতে, উৎপাদনহীন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মডার্ন ডাইং ও রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত করা হয় গত বুধবার (১৮ জুলাই)। এরপর দিন বৃহস্পতিবার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা ১৪টি কোম্পানিতে ক্রেতা সংকট ছিলো। এদিন দাম কমার শীর্ষে ছিলো এই ক্যাটাগরির প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছিলো মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ারের। শেয়ারটির দাম কমেছিলো ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে মেঘনা পেটের শেয়ারের দাম কমেছিলো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, সমতা লেদার ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, হাক্কানি পাল্প ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, দুলামিয়া কটন ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইউনাইটেড এয়ার ৯ দশমিক ০১ শতাংশ, অলটেক্স ৯ দশমিক ০১ শতাংশ ও জিলবাংলা সুগার ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। এছাড়াও ঢাকা ডাইং, এমারেল্ড ওয়েল, বিডি অটোকারস, সিএনএ টেক্সটাইল, কেঅ্যান্ডকিউ, নর্দান জুটের শেয়ারের দাম কমেছিলো ব্যাপক হারে।
একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে নতুন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার। এদিনও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ৪৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ৩৫টি কোম্পানির শেয়ারের, আর দাম বেড়েছে মাত্র ৭টি কোম্পানির শেয়ারের। অন্যদিকে লেনদেন অপরিবর্তিত ও লেনদেন হয়নি ১টি করে কোম্পানির শেয়ারের। তার বিপরীতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
এদিন ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষে ছিলো- ইমাম বাটন, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, ইউনাইটেড এয়ার, জুট স্পিনিং, মেঘনা পেট, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, দুলামিয়া কটন, শ্যামপুর সুগার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও ঢাকা ডাইং। এই কোম্পানিগুলোর সবগুলোই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ডিএসই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও পুঁজিবাজারের কারসাজিরোধে এরইমধ্যে দু’টিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যেসব কোম্পানি উৎপাদনে নেই, ভবিষ্যতেও এসব কোম্পানি উৎপাদনে আসার সুযোগ নেই তাদেরকে পুঁজিবাজারে রাখা হবে না। কারণ এসব কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি হয়। শেয়ারের দামও অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। আর বিনিয়োগকারীরাও লোভে পড়ে বিনিয়োগ করেন, ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জাঙ্ক শেয়ারের দাম কমছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করছেন না। এ দু’টোই পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। তার মানে হলো সম্প্রতি ডিএসই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছেছে।
এই সিদ্ধান্ত আরো আগে নিলে পুঁজিবাজারে জন্য আরো ভাল হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ কিংবা অদূর ভবিষ্যতে উৎপাদন চালু হওয়ার সুযোগ নেই, সেইসব কোম্পানিকে দ্রুত ডিলিস্টেড করা উচিৎ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এমএফআই/জেডএস